প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে ২৫ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন নারী বিচারক নিযুক্ত হওয়া প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে নারীবান্ধব বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় এখনো কিছু কাঠামোগত ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে নারীদের জন্য পেশাগত প্রস্তুতি, কার্যকর দিকনির্দেশনা ও নীতিগত সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন।’
গতকাল থাইল্যান্ডে এশিয়ার নারী বিচারকদের আঞ্চলিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইউএনডিপি আয়োজিত একটি কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য বর্তমানে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে অবস্থান করছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচারবিভাগে নারীর অংশগ্রহণ কেবল প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন নয় বরং এটি ন্যায়বিচারের গুণগত উৎকর্ষ ও জনআস্থার বিশেষ প্রতীক। নারী বিচারকরা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে হয়রানি ও পারিবারিক বিরোধের মতো সংবেদনশীল মামলায় মানবিক অন্তর্দৃষ্টি ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করে থাকেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, নারী বিচারকরা ক্ষমতার ভারসাম্য ও মর্যাদার সূক্ষ্ম দিকগুলো অনুধাবন করতে বেশি সক্ষম, যা বিচার ব্যবস্থাকে আরও ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তোলে। বিচার কর্ম বিভাগে সত্যিকারের সমতা শুধু নিয়োগের মাধ্যমে আসে না বরং এটি একটি রূপান্তরের প্রক্রিয়া। এ লক্ষ্যে স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া, নারীবান্ধব পেশাগত পরিবেশ, মেন্টরশিপ নেটওয়ার্কের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে এশিয়ার বিচার বিভাগগুলোতে সমৃদ্ধ প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের জেলা আদালতগুলোতে ৬২৫ জন নারী বিচারক কর্মরত থাকলেও উচ্চ আদালতে তাদের সংখ্যা মাত্র ১০ শতাংশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে ১১৭ জন বিচারকের মধ্যে মাত্র ১২ জন নারী বিচারক রয়েছেন। এখনো বাংলাদেশে কোনো নারী প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হননি। এ ছাড়া, বাংলাদেশে আইন পেশায় নারীর সংখ্যা ১২ শতাংশেরও কম, যা পেশাগত অগ্রগতিতে নারীর সীমিত অংশগ্রহণের ইঙ্গিত বহন করে।