-
পেন্ডিং বিষয় নিষ্পত্তিতে ইসিকে নির্দেশ
-
রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেবে ইসি
-
রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলো : জামায়াত আমির
রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে এক যুগ আগে হাই কোর্টের দেওয়া রায় বাতিল করেছেন আপিল বিভাগ। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতের করা আপিল সর্বসম্মতিতে মঞ্জুর করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ গতকাল এ রায় দেন। রায়ে জামায়াতের রেজিস্ট্রেশনসংক্রান্ত পেন্ডিং (অনিষ্পন্ন) বিষয় এবং অন্য কোনো ইস্যু যদি থাকে তা সাংবিধানিক ম্যান্ডেট পুরোপুরি প্রয়োগ করে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ রায়ের ফলে জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার পথ খুলল। এদিকে ইসি জানিয়েছে, আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তারা।
এর আগে ১৪ মে দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) ওপর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ রায়ের জন্য ১ জুন তারিখ ধার্য করেন। সে অনুযায়ী গতকাল সকাল ১০টার পর রায় ঘোষণা করেন আদালত। আদালতে জামায়াতের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম। এর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাই কোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। গতকালের রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাই কোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা ন্যায়সংগত হয়নি। এ অনুযায়ী গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাই কোর্ট বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতে দেওয়া রায় ও আদেশ বাতিল করা হলো। রায়ের পর আপিলকারীর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘আদালত নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন এবং অন্য যে ইস্যু নির্বাচন কমিশনের সামনে আসবে, সেগুলো যাতে দ্রুত নিষ্পত্তি করে। এখানে অন্য ইস্যু বলতে প্রতীক বোঝানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পেল এবং প্রতীকের বিষয়টিও নির্বাচন কমিশনের সামনে পাঠানো হলো অন্য ইস্যু হিসেবে। সংক্ষিপ্ত আদেশ চেয়েছি।’ রায়ের পর নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রতীকের বিষয় এ মামলার ইস্যু ছিল না। প্রতীকের বিষয়ে মাননীয় আদালত কোনো নির্দেশনা দেননি। এটা ২০১৬ সালে অন্য একটা মাধ্যমে হয়েছিল। অন্যভাবে এটার সমাধান করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াতকে ২০০৮ সালে নিবন্ধন দিয়েছিল। হাই কোর্ট যে রায়টা দিয়েছিলেন ২০১৩ সালে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে দিয়ে; ওই রায়টাকে আজ মাননীয় আদালত বাতিল করে দিয়েছেন। ফলে হাই কোর্টের রায়ের আগে যে অবস্থাটা ছিল, সে অবস্থায় ফেরত এলো।’
রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেবে ইসি : আদালতের রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল বিকালে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীকের ব্যাপারে মাননীয় আদালতের কোনো পর্যবেক্ষণ আমরা পাইনি। পেলে এ বিষয়ে আইনগতভাবে যেটা প্রযোজ্য, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলো : জামায়াত আমির : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হলো বলে জানান জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন। ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘১ জুন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সর্বসম্মত রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী তার নিবন্ধন ফিরে পাওয়ায় আমরা মহান রবের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, আলহামদুলিল্লাহ।’
‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক নিয়ে প্রত্যাহার আবেদন মঞ্জুর: এর আগে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের উপস্থিতিতে ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ফুল কোর্ট সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে ‘দাঁড়িপাল্লা’ ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে একমাত্র সুপ্রিম কোর্টের মনোগ্রামে ব্যবহৃত হবে। এ অনুসারে কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীকে প্রতীক হিসেবে দাঁড়িপাল্লা বরাদ্দ না দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) চিঠি দেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরপর ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা অধিকতর সংশোধন করা হয়, যাতে প্রার্থীর জন্য ৬৪টি প্রতীকের তালিকা রয়েছে। এতে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক উল্লেখ নেই। ফুল কোর্ট সভার ওই সিদ্ধান্ত বাতিল বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী গত ১২ মে আপিল বিভাগে আবেদন দাখিল করে। দলটির করা আপিল ও লিভ টু আপিলের সঙ্গে আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে। ১২ মে করা আবেদনটি প্রত্যাহার চেয়ে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রতিকারে নির্বাচন কমিশনের প্রতি পর্যবেক্ষণ চেয়ে ১৪ মে একটি আবেদন দেয় জামায়াতে ইসলামী। রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, প্রত্যাহার আবেদন মঞ্জুর করা হলো কোনো পর্যবেক্ষণ ছাড়াই।