সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলা-মামলা চলছেই। গত মাসে (এপ্রিল) ৬২ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হামলা, আইনি হয়রানি, গ্রেপ্তার, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আগের মাসে নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছিলেন ৩৪ জন সাংবাদিক, যা এপ্রিলে এসে প্রায় দ্বিগুণ হয়। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ২১ জন ও ফেব্রুয়ারিতে ৩৮ জন সাংবাদিক হামলা, মামলা, হয়রানি, হুমকি ও ছাঁটাইয়ের শিকার হন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে। আর এই বাস্তবতা সামনে রেখে আজ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত মাসে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হত্যা, একটি মানহানি ও একটিতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগ আনা হয়েছে। বগুড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হন দুই সাংবাদিক। এমন প্রায় ২৪টি ঘটনায় ৬২ জন সাংবাদিক মামলা, হয়রানি, নির্যাতনের শিকার হন। গত বছরের এপ্রিলেও ৩১টি ঘটনায় ৫১ জন সাংবাদিক হামলা, মামলা, হয়রানির শিকার হয়। তবে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে গত বছরের তুলনায় ১৬ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসকে সামনে রেখে গতকাল রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) ২০২৫ সালের এ সূচক প্রকাশ করে। সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯তম, স্কোর ৩৩ দশমিক ৭১। ২০২৪ সালে ২৭ দশমিক ৬৪ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম। ২০২৩ সালে অবস্থান ছিল ১৬৩তম। অর্থাৎ, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে অবনতি হয় ও চলতি বছরে উন্নতি হয়েছে। তবে প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালে এসে ২০২৩ সালের চেয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪ ধাপ এগোলেও, স্বাধীনতার বিভিন্ন মানদণ্ডে (রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইনি, সামাজিক, নিরাপত্তা) স্কোর বাড়েনি। চলতি বছর গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে শীর্ষে থাকা নরওয়ের স্কোর যেখানে ৯২ দশমিক ৩১, সেখানে বাংলাদেশের স্কোর ৩৩ দশমিক ৭১। ২০২৩ সালে স্কোর ছিল ৩৫ দশমিক ৩১।
এদিকে হামলা-মামলাই নয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমকে হুমকি দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। সম্প্রতি এমন হুমকির জেরে দুটি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের কর্মী ছাঁটাই করে। সংবাদ প্রচার বন্ধ করে দেয় একটি চ্যানেল। আরেকটি চ্যানেল তাদের এক কর্মীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে তদন্ত শুরু করে। অভিযোগের তির ওঠে সরকারের দিকে। যদিও ঘটনার পরপরই তথ্য উপদেষ্টা জানান, সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি ও সংবাদ প্রচার বন্ধের পেছনে সরকারের কোনো হাত নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটা সরকারই সংবাদমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছে। কখনো বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে, কখনো গায়েবি ফোনে। বর্তমান সরকার হয়তো গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে না। তবে সংবাদমাধ্যমের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।