দীর্ঘ ১৬ বছর পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন বিস্ফোরক মামলায় জামিন পাওয়া ১৭৮ বিডিআর সদস্য। তাদের কাগজপত্র কারাগারে আসার পর যাচাইবাছাই শেষে অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকায় মুক্তি দেওয়া হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে গতকাল তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ৪৩, কাশিমপুর-১ থেকে ২৭, কাশিমপুর-২ থেকে ৯৫, কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি থেকে ১৩ জন।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকার পিলখানায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলার আসামিদের মধ্যে ১৩৫ জন বিডিআর সদস্য (বর্তমানে বিজিবি) গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের তিনটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। বিডিআর সদস্যদের মুক্তির খবরে কারা কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে তাদের স্বজনরা সকাল থেকে ভিড় জমান। এ সময় তাদের চোখেমুখে ছিল আনন্দের হাসি। কেউ কেউ ফুল, মিষ্টি নিয়ে তাদের প্রিয়জনদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মুক্তির পর বিডিআর সদস্যরা কারাফটকে পৌঁছলে স্বজনরা তাদের জড়িয়ে ধরেন। মুক্তি পাওয়া বিডিআরের অনেক সদস্য তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবার মুক্তিপ্রাপ্ত বিডিআর সদস্যদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। এ সময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর জেলার মো. তরিকুল ইসলাম জানান, পিলখানায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের মধ্যে এ কারাগার থেকে ২৭ জন সাবেক বিডিআর সদস্য মুক্তি পেয়েছেন। তাদের জামিনের কাগজপত্র গতকাল ভোরে কারাগারে পৌঁছে। যাচাইবাছাই শেষে অন্য কোনো মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। এ কারাগারে বিডিআর সদস্য ৮৪ জন বন্দি ছিলেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার মো. আল মামুন জানান, পিলখানায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের মধ্যে এ কারাগার থেকে ৯৫ জন সাবেক বিডিআর সদস্য মুক্তি পেয়েছেন। এ কারাগারে ৩৭৮ জন বিডিআর সদস্য বন্দি ছিলেন।
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বিস্ফোরক মামলায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন ৪৩ বিডিআর সদস্য। তাদের কারামুক্তির প্রত্যাশায় ঢাকার কেরানীগঞ্জ কারাগারের সামনে ভিড় করেন স্বজনরা। গতকাল সকাল থেকে কারাগারের সামনে ফুল নিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে তাঁদের। সেখানে কথা হয় নায়েক (সিগন্যাল) মইনুল হোসেনের মেয়েজামাই মমিনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। আমাদের আট মাসের একটি মেয়েসন্তান আছে। আমার মেয়ের নামও কারাগার থেকে তিনিই রেখেছেন। আমি সকাল ৮টা থেকে তাঁকে রিসিভ করার জন্য অপেক্ষা করছি। তিনি আমাকে কখনো সরাসরি দেখেননি, আমিও দেখিনি। তাই এই অনুভূতি ব্যক্ত করার ভাষা নেই।’ প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বিস্ফোরক মামলায় বিডিআরের ওই সদস্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছিল। গত ২০ জানুয়ারি ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার অস্থায়ী আদালত তাদের জামিন দেন।