পর্দায় তাঁরা দর্শকপ্রিয় নির্মাতা। তাঁদের হাত ধরেই রঙিন ফ্রেমে বন্দি হন শিল্পীরা। এক সময় পেয়ে যান দর্শকপ্রিয়তা। তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। কোনো কোনো নির্মাতা অভিনয়ে যুক্ত হয়েছেন নিতান্ত শখের বশে অথবা পেশা হিসেবে নিয়ে। তেমন কয়েকজন নির্মাতা নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল
আমজাদ হোসেন
বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী ছিলেন আমজাদ হোসেন। শুধু নির্মাণেই নন, তিনি একাধারে ছিলেন অভিনেতা ও লেখক। নির্মাণের বাইরে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে গানও লিখেছেন। টিভি নাটকের একজন গুণী নাট্যনির্মাতা ও অভিনেতা হিসেবেও ছিল তাঁর সুনাম। আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঈদের নাটক বলতে ছিল আমজাদ হোসেনের লেখা, পরিচালনা ও অভিনয়ে ‘জব্বার আলী’ নাটকটি; যা সে সময় বিপুল দর্শকপ্রিয়তা পায়। তিনি অভিনয় করেছেন জব্বার আলী চরিত্রে।
সালাউদ্দিন লাভলু
নাটকের পরিচিত মুখ সালাউদ্দিন লাভলু। তিনি চিত্রগ্রাহক, চিত্রনাট্যকার এবং টিভি পরিচালক হিসেবে কাজ করলেও ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। তাঁর পরিচালিত ও অভিনীত ‘রঙের মানুষ’ সবার কাছে সমাদৃত হয়। তাঁর ভবের হাট, ঘর কুটুম, গরুচোর, পত্রমিতালী, স্বপ্নের বিলাত, ঢোলের বাদ্য, পাত্রী চাই, ওয়ারেন, শান্তি মলম ১০ টাকা ইত্যাদি দর্শকপ্রিয়।
অনিমেষ আইচ
নির্মাতা হিসেবে অনিমেষ আইচ সুপরিচিত। তিনি ছোট পর্দা ও বড় পর্দা-দুই মাধ্যমেই তাঁর সরব উপস্থিতি। তিনি চিত্রনাট্য লেখকও।
নাটক নির্মাণ করলেও চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর বরাবরই আগ্রহ ছিল। সেই হিসেবে তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ ও অভিনয় করেছেন। বেশ কিছু নাটকে তিনি অভিনয়ও করেছেন। তিনি ‘তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’, ‘ফেরার কোনো পথ নেই থাকে না কোনোকালে’, ‘উধাও’ ও ‘দেবী’, ‘কাঁটা’তে অভিনয় করেন।
সুমন আনোয়ার
অভিনেতা হওয়ার লক্ষ্যেই ১৯৯৪ সালে থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন নির্মাতা সুমন আনোয়ার। তবে এক সময় তিনি হয়ে গেলেন নির্মাতা। তিনি নিয়মিত পরিচালক, অনিয়মিত অভিনেতা। তাঁর অভিনীত কাজের মধ্যে রয়েছে- যুদ্ধ, অপরিচিতা, একটি যথাযথ মৃত্যু, সূর্যের হাসি, আলগা নোঙর, না মানুষ। সম্প্রতি অভিনয় করেছেন ব্ল্যাকমানি, চক্কর-এ। তিনি ‘টগর’-এও অভিনয় করছেন।
ইফতেখার আহমেদ ফাহমি
ছবিয়াল-এর মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী নির্মাতা ইফতেখার ফাহমি। তাঁর নির্মিত কাজ হয়েছে প্রশংসিত। পাশাপাশি তিনি নিয়মিত নাটকে অভিনয় করেছেন। করেছেন ‘হ্যাঁ না’, ‘সিক্সটি নাইন’, ‘তালপাতার সেপাই’, ‘বিপরীতে আমি’, ‘হাউসফুল’, ‘টু বি কন্টিনিউড’, ‘ফিল ইন দ্য গ্যাপ’, ‘ক্যান্ডি ক্রাশ’ প্রভৃতি।
শরাফ আহমেদ জীবন
ছবিয়াল বা ভাই-বেরাদর গ্রুপের আরেকজন সফল নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন। দর্শকপ্রিয় অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি। অভিনয় করার ইচ্ছা না থাকলে ইদানীং নিয়মিত অভিনয় করছেন। হয়েছেন অসংখ্য নাটকের অভিনেতা ও বিজ্ঞাপনের মডেল। ‘জাগো’ সিনেমাসহ ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকের তুমুল আলোচিত চরিত্র ‘বোরহান ভাই’ নামে তিনি এখন পরিচিত। ‘ফিমেল’-এও তাঁর চরিত্র পছন্দ করেছেন দর্শক। ঈদে তার নির্মিত অনুদানে সিনেমা ‘চক্কর’ প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়।
জিয়াউল হক পলাশ
জনপ্রিয় অভিনেতা-নির্মাতা জিয়াউল হক পলাশ। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকে তাঁর অভিনীত কাবিলা চরিত্রটি এখন মানুষের মুখে মুখে। অন্যদিকে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’-এর পারভেজসহ একাধিক চরিত্র দিয়েও দর্শক মাতিয়েছেন তিনি। তিনি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও ইশতিয়াক আহমেদ রুমেলের সঙ্গে সহপরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তার নির্মাণে অসংখ্য কাজ হয়েছে। তিনি অমির সব প্রজেক্টে কাজ করছেন নিয়মিতভাবে।
সহীদ উন নবী
পরিচালনা ও অভিনয় দুই মাধ্যমে সমানতালে কাজ করছেন পরিচিত মুখ সহীদ উন নবী। তবে তিনি নিজেকে নির্মাতা পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। বর্তমানে নির্মাণ ও অভিনয় নিয়ে দারুণ ব্যস্ত তিনি। তিনি অসংখ্য একক নাটকে অভিনয় করেছেন।
তালিকায় আরও যাঁরা...
আশফাক নিপুণ অভিনয় করেছেন ‘টু ইন ওয়ান’, ‘উপসংহার’, ‘ওয়েটিং রুম’, ‘মুকিম ব্রাদার্স’, ‘মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট’; বিজ্ঞাপনও করেছেন। মোস্তফা কামাল রাজ অভিনয় করেছেন ‘ফাউল’, ‘লস প্রজেক্ট’, ‘পিক পকেট’, ‘লাকি থার্টিন’। ইফতেখার আহমেদ ফাহমির হাত ধরেই অভিনয়ে এসে মাবরুর রশীদ বান্নাহ অভিনয় করেন ‘এসো নিজে করি’, ‘হাউসফুল’, ‘ফিফটি ফিফটি’, ‘ম্যাডবয়’।