সালাত। মুমিনের হৃদয় প্রশান্তির অনন্য ঠিকানা। ইমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
আল্লাহতায়ালার সঙ্গে সুগভীর সম্পর্ক স্থাপনের অব্যর্থ উপায়। সালাত জীবনকে সাজিয়ে তোলে। যাপিত জীবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। কোরআন সুন্নাহে সালাত আদায়কারীর জন্য অনেক পুরস্কারের ঘোষণা প্রদান করা হয়েছে। সেখান নির্বাচিত ছয়টি পুরস্কারের গল্প শুনুন।
এক. সফলতার নিশ্চয়তা
সালাত বা নামাজ। মানবজীবনে সফলতার অনন্য পাথেয় এই সালাত। সালাত মানুষের জীবন সুন্দর করে। আলোকিত করে। যাপিত জীবনে মনোমুগ্ধকর সুরভী ছড়ায় এই সালাত। সালাত ব্যক্তিকে সফলতার কাক্সিক্ষত মনজিলে পৌঁছে দেয়। সালাত সফল মুমিনের প্রধান গুণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই সফলতা লাভ করেছে মুমিনগণ, যারা তাদের সালাতে আন্তরিকভাবে বিনীত।’ (সুরা মুমিনুন- ২৩ : ১-২)
আয়াতে সফল মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে সালাতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সালাত মুমিনের জীবনকে সফল ও অর্থবহ করে তুলে।
দুই. পবিত্র জীবন লাভ
সালাত ব্যক্তিকে পাক পবিত্র জীবন বোধে উদ্দীপ্ত করে। আল্লাহর অবাধ্যতা ও নাফরমানির অনিঃশেষ অন্ধকার থেকে পুণ্যের আলোকময় রাজপথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগায়। যথার্থভাবে সালাত আদায়ে অভ্যস্ত ব্যক্তির মনন মানসে অনির্বাচনীয় সুখানুভূতি ও পবিত্র আমেজ বিরাজ করে। ফলে তার জন্য অন্যায় অশ্লীল গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়ে যায়। এভাবে সালাত ব্যক্তিকে অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই নামাজ ব্যক্তিকে অশ্লীল ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সুরাতুল আনকাবুত- ২৯ : ৪৫)
তিন. রহমত প্রাপ্তি
আমরা সবাই আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। আল্লাহর রহমত পেতে চাতক পাখির মতো সবাই অপেক্ষমাণ থাকি। আর এই রহমত প্রাপ্তির অনন্য একটি উপায় হচ্ছে, একাগ্রচিত্তে সালাত আদায়ের চেষ্টা করে যাওয়া। ইরশাদ হয়েছে- ‘তোমরা সালাত কায়েম করো, জাকাত দাও এবং রসুলের আনুগত্য করো। এতে তোমাদের ওপর রহমত বর্ষণ করা হবে।’ (সুরাতুন নূর- ২৪ : ৫৬)
চার. পরিচ্ছন্নতার সৌরভ
সালাত ব্যক্তির জীবনকে গুনাহ থেকে ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তুলে। আর গুনাহমুক্ত স্বচ্ছ জীবনযাপন করা আমাদের সবারই পরম আকাক্সক্ষার। এ আকাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে একাগ্রচিত্তে সালাত আদায়ের বিকল্প নেই।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের কারও বাড়ির দরজার সামনেই যদি একটি নদী থাকে আর সে ওই নদীতে প্রতিদিন পাঁচবার গোসল করে তাহলে কি তার শরীরে কোনো ময়লা থাকতে পারে? এ ব্যাপারে তোমরা কী বল? সবাই বললেন, না, তার শরীরে কোনো ধরনের ময়লা থাকবে না। তখন রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটিই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দৃষ্টান্ত। এর দ্বারা আল্লাহতায়ালা সব পাপ মুছে নিঃশেষ করে দেন। (সহিহ মুসলিম- ১৪০৮)
পাঁচ. গুনাহমুক্ত নির্মল জীবন
শীতকালে গাছের পাতা ঝরে যায়। এটা প্রকৃতির সাধারণ নিয়ম। একজন মানুষ যখন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তার গুনাহগুলোও গাছের পাতার মতো ঝরে যায়।
হজরত আবুজার গিফারি (রা.) বর্ণনা করেন- শীতকালে এক দিন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে বের হলেন। আমি তাঁর সঙ্গেই ছিলাম। গাছ থেকে তখন পাতা ঝরছিল। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গাছের দুটো ডাল হাত দিয়ে ধরলে সেখান থেকে স্বাভাবিকভাবেই পাতা ঝরতে থাকে। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে ডাক দিয়ে বলেন, শোন আবুজার! একজন মুসলমান যখন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তখন এই গাছের পাতাগুলোর ন্যায় তার গুনাহগুলোও ঝরে যায়। (মুসনাদে আহমাদ- ২১৫৫৬)
ছয়. জান্নাত লাভের প্রতিশ্রুতি
আমরা সবাই জান্নাতে যেতে চাই। জান্নাতুল ফেরদাউসের মনোমুগ্ধকর নহরের পাশে বসে গল্পে গল্পে কেটে যাবে বেলা, আনন্দের উচ্ছলতায় মেতে উঠব আমরা- আমাদের সবার হৃদয় কোণে এ স্বপ্ন দোলা দিয়ে যায় প্রায়ই। কল্পপাখায় ভর করে যেন উড়তে থাকি জান্নাতের সবুজ প্রান্তরে। মানব হৃদয়ের পরম আরাধ্য এই জান্নাতের দেখা মিলবে কীভাবে? জান্নাতের অকল্পনীয় সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে মেতে উঠতে আমাদের করণীয় বা কী?
আপনি সালাতে নিয়মিত হোন। একাগ্রচিত্তে ধীরস্থিরভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করুন। আপনার রব আপনাকে আপনার পরম আকাক্সিক্ষত জান্নাতে পৌঁছে দেবেন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম টঙ্গী, গাজীপুর