জীবনের প্রতিটি সাফল্যের পেছনে থাকে অগণিত ত্যাগ। আলোয় মোড়া মঞ্চে দাঁড়িয়ে যে তারকাদের দেখি আমরা, সেই উজ্জ্বল হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকে কিছু হারানোর গল্পও। কারও কাছে ত্যাগ মানে প্রিয় কিছু ছেড়ে দেওয়া, কারও কাছে ভালোবাসার মানুষের জন্য নিজেকে পেছনে সরিয়ে নেওয়া। প্রিয় কিছু তারকার সেই ব্যক্তিগত ত্যাগের গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন। এসব নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল
অভিনয়ের জন্য পরিবার থেকে দূরে নিশো
সবচেয়ে কঠিন ত্যাগ হয়তো কাছের মানুষ থেকে দূরে থাকা। অভিনেতা আফরান নিশো বলেন, ‘আমি এলিফ্যান্ট রোডে পরিবারের সঙ্গে বড় হয়েছি। ভাবিনি কখনো তাদের ছেড়ে যাব। কিন্তু শুটিংয়ের সুবিধার জন্য উত্তরায় থাকতে হচ্ছে। প্রতিদিন যাওয়া-আসা সম্ভব নয়। তাই একসঙ্গে বসে খাওয়ার সময়টাও হারিয়ে গেছে।’ নিশো জানেন, এটাই বাস্তবতা। প্রিয় পেশার জন্য প্রিয় মানুষ থেকে দূরে থাকা, তার কাছে এটাই জীবনের সবচেয়ে বাস্তব ত্যাগ।
পরিবারের ত্যাগে মেহ্জাবীন চৌধুরী
নিজের জন্য নয়, পরিবারের জন্য ত্যাগ করেছেন মেহ্জাবীন চৌধুরী। ‘আমার পুরো পরিবার দুবাই থেকে বাংলাদেশে এসেছে শুধু আমার ক্যারিয়ারের জন্য। আমার বোনও এখানে লেখাপড়া করছে, না হলে ওরা ওখানেই স্থায়ী হতো। তাদের জীবনমান হয়তো আরও ভালো হতো। কিন্তু তারা কখনো অভিযোগ করেনি। এই ত্যাগই আমাকে প্রতিদিন নতুন করে শক্তি দেয়।’ মেহ্জাবীনের কণ্ঠে ছিল কৃতজ্ঞতার আবেগ, তার আলোর পেছনে জ্বলছে পরিবারের সেই নীরব ত্যাগ।
গানের জন্য আইনজীবী হওয়া ছেড়েছেন আঁখি
আঁখি আলমগীরের মুখে সব সময় হাসি, কিন্তু সেই হাসির পেছনেও আছে একটা আফসোস। তিনি বলেন, ‘আমি ল’তে ভর্তি হয়েছিলাম। বার অ্যাট ল করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তখন আমার অ্যালবাম দারুণ হিট, কাজও প্রচুর। শিক্ষকরা বললেন, ‘তুমি একসঙ্গে দুটো করতে পারবে না।’ তাই গান বেছে নিয়েছিলাম। পরিবারের ইচ্ছা ছিল আমি আইনজীবী হই, কিন্তু সেটা পূরণ করতে পারিনি।’ আজও যখন তিনি কাউকে লইয়ারের পোশাকে দেখেন, বুকের ভিতর একটু হাহাকার জেগে ওঠে। তবু গানই তার জীবনের ধ্রুবতারা- এই ভালোবাসার জন্যই আঁখির সেই ত্যাগ।
ভালোবাসার টানে পরিবার ছেড়েছিলেন কনা
গায়িকা কনা যেন মঞ্চের আলোয় জন্মেছেন। কিন্তু সেই আলো পেতে তাকে কতবার অন্ধকারে থাকতে হয়েছে, তা কেবল তিনিই জানেন। তিনি বলেন, ‘সব সময় মানুষের ভালোবাসার পেছনে ছুটেছি। পরিবারের অনেক অনুষ্ঠান মিস করেছি। এমনকি ২০১২ সালের ঈদও করেছি বাহরাইনে, প্রথমবার পরিবার ছাড়া। মন চাইছিল না, কিন্তু সেখানকার মানুষের আগ্রহে না করতে পারিনি।’ মানুষের ভালোবাসা পেতে নিজের ভালোবাসার মানুষের পাশে না থাকা, এইটাও এক বড় ত্যাগ নয় কি?
বন্ধুর প্রেমের সফলতায় আমিন খান
তারকারা হাসে, খেলে, জীবন উপভোগ করে, এই ধারণা অনেক সময় ভ্রান্ত। অভিনেতা আমিন খানের কণ্ঠে যখন গল্পটি শুনি, মনে হয় ত্যাগ কখনো কখনো মজার রূপও নেয়। তিনি হেসে বলেন, ‘কলেজে পড়ার সময় এক বন্ধু প্রেম করে বিয়ে করবে, টাকার দরকার। আমার কাছে কিছু ছিল না। প্রিয় একটা দেয়ালঘড়ি বাসা থেকে চুরি করে বিক্রি করেছিলাম। পরে ধরা খেলাম, কিন্তু তখন তাদের বিয়ে হয়ে গেছে!’ এই ‘চুরি করা ঘড়ির ত্যাগে’ বন্ধুর প্রেম সফল হয়, আর আমিন খান পান জীবনের এক অদ্ভুত আনন্দ, যেখানে হাসির ভিতরেও লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা। জীবনের হিসাবের খাতায় কেউ হারায়, কেউ পায়। তারকারাও মানুষ, তাদের হাসির ভিতর লুকিয়ে থাকে অনেক ‘না পাওয়া’। কখনো আইনের ক্লাস, কখনো পারিবারিক উৎসব, কখনো শুধু ঘরে ফেরা- সবটাই তারা ছেড়েছেন আমাদের ভালোবাসার জন্য। আর তাই তাদের এই ত্যাগের গল্পগুলো আসলে আমাদেরই গল্প, স্বপ্ন দেখার, ভালোবাসার, আর হারিয়ে যাওয়ার গল্প।