আমাদের জীবন গুনাহতে ভরা। আমাদের উচিত বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া করা। গুনাহ স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়ে আকুতি ও কাতর হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করতে হবে। ইউসুফ (আ.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন এই বলে, ‘হে আমার রব, তুমি আমাকে রাষ্ট্রক্ষমতা দান করেছ, তুমি আমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দিয়েছ, হে আসমানসমূহ ও জমিনের স্রষ্টা, দুনিয়া এবং আখেরাতে তুমিই আমার একমাত্র অভিভাবক, একজন অনুগত বান্দা হিসেবে তুমি আমার মৃত্যু দিও এবং পরকালে তুমি আমাকে নেককার মানুষের দলে শামিল কর (সুরা ইউসূফ, আয়াত ১০১)।’
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ইবরাহিম ও ইসমাইল যখন এই ঘরের ভিত্তি ওঠাচ্ছিল, (তখন তারা আল্লাহর কাছে দোয়া করল) হে আমাদের রব, আমরা যে উদ্দেশ্যে এ ঘর নির্মাণ করেছি তা তুমি আমাদের কাছ থেকে কবুল কর, অবশ্যই তুমি সবকিছু জানো ও শুনো। তারা আরও বলল, হে আমাদের রব আমাদের উভয়কে তুমি তোমার অনুগত মুসলিম বান্দা বানিয়ে দাও, হে মালিক, তুমি ইবাদতের আনুষ্ঠানিক নিয়মনীতিসমূহ আমাদের দেখিয়ে দাও এবং তুমি আমাদের ওপর দয়াপরবশ হও, অবশ্যই তুমি তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু (সুরা বাকারা, আয়াত ১২৭-১২৮)। বান্দার জন্যে সবচেয়ে সহজ ও কল্যাণকর দোয়া, হে আমাদের রব, তুমি দুনিয়ায় আমাদের কল্যাণ দাও, কল্যাণ দাও পরকালেও এবং তুমি আমাদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও (সুরা বাকারা, আয়াত ২০১)।
রসুল (সা.) বলেন, আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানজনক কোনো জিনিস নেই (তিরমিজি শরীফ)। আল্লাহর দরবারে পেশ করার জন্য দোয়া পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, হে আমাদের রব, তুমি আমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দাও, আমাদের আমলনামা থেকে আমাদের গুনাহসমূহ মুছে দাও, তোমার নেক লোকদের সঙ্গে তুমি আমাদের মৃত্যু দান কর (সুরা আল ইমরান, আয়াত ১৯৩)। আয়াতটিতে যে আবেদন করা হয়েছে। তার মধ্যে আছে প্রথমত আমরা প্রতিনিয়ত অপরাধ করছি, গুনাহ করছি তার জন্য ক্ষমার আবেদন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত আমাদের আমলনামায় যত গুনাহ রেকর্ড করা আছে তা মুছে ফেলার কথা বলা হয়েছে এবং তৃতীয়ত নেককার ও সৎকর্মশীলদের সঙ্গে মৃত্যু দান করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ। আয়াতে বলা হয়েছে, হে আমাদের রব, তুমি তোমার নবী-রসুলদের মাধ্যমে যেসব পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছ তা তুমি আমাদের দান কর এবং কেয়ামতের দিন তুমি আমাদের অপমানিত কর না, নিশ্চয়ই তুমি ওয়াদার বরখেলাপ কর না (সুরা ইমরান, আয়াত ১৯৪)। রসুল (সা.) যখন কাফেরদের মৌখিকভাবে দাওয়াত ও তাবলিগের মাধ্যমে হেদায়েতের আশা পরিত্যাগ করেন তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে ওহি হিসেবে কোরআনে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালাই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, সমস্যা সংকটে আমি তাঁর ওপরই ভরসা করি এবং তিনিই হচ্ছেন মহান আরশের একচ্ছত্র অধিপতি (সুরা তওবা, আয়াত ১২৯)। নূহ (আ.)-কে তাঁর জাতি পাগল বলে আখ্যায়িত করল। তাঁকে ধমকও দেওয়া হলো। তখন তিনি আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ আমি একান্ত অসহায়, তুমি এদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নাও (সুরা কামার, আয়াত ১০)।’
নবী ইউনুস (আ.) তাঁর কওমের লোকদের দীনের পথে আনার চেষ্টা না করে আল্লাহর অনুমতি ছাড়া জনপদ ত্যাগ করলে আল্লাহ তাঁর ওপর রুষ্ট হন এবং তাঁকে শাস্তি দেন। তাঁকে মাছের পেটে এবং সাগরের অতলে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এই কঠিন বিপদের সময় তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দোয়া করেন, ‘লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালেমিন (হে আল্লাহ তুমি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই)। তুমি পবিত্র মহান, অবশ্যই আমি গুনাহগার/অপরাধী (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৭)।’ দয়াময় আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন এবং ঘোষণা দিলেন, অতঃপর আমি তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে উদ্ধার করলাম। আর এভাবেই আমি আমার মোমেন বান্দাদের সব সময় উদ্ধার করি (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ৮৮)। সুবহানাল্লাহ।
সুতরাং আমাদের সবার মনে রাখতে হবে, এই জীবন চলার পথে বিপদ-আপদ আমাদের সঙ্গী। সুতরাং আমাদের প্রকৃত মোমেন হয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। কায়মনোবাক্যে চাইতে হবে। তবেই আমরা তাঁর সাহায্য আশা করতে পারি। বিপদ যত বড়ই হোক না কেন আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে বান্দার দোয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। সুতরাং আমরা কোরআনের দোয়াগুলোর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাহায্য কামনা করি। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের দোয়া কবুল করে পার্থিব জীবনে বিপদমুক্ত রাখতে সাহায্য করবেন তেমনি পরকালের জীবনে জান্নাত লাভের তৌফিক দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক