২৭ দশমিক ২০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ফেনী শহরে প্রায় ৪ লাখের অধিক মানুষের বসবাস। ফেনী গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোর মধ্যে একটি হলেও এই জেলার প্রধান শহরেই নেই পর্যাপ্ত গণশৌচাগারের ব্যবস্থা। প্রতিদিন হাজারো মানুষ শহরের প্রধান সড়ক, বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চলাফেরার করলেও প্রয়োজনীয় পাবলিক টয়লেটের অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
ফেনী পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ফেনীর সদর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় একটি, পৌর হকার্স মার্কেটে একটি, মহিপাল বাস টার্মিনালে একটি, সোনাগাজী বাসস্ট্যান্ডে একটি এবং ইসলামপুর রোডে একটি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। যার মধ্যে ইসলামপুর রোডের টয়লেটটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাকি ৪টি টয়লেট থাকলেও সেগুলোতে ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন। যা এককথায় অনেকটাই ব্যবহার অনুপযোগী।
বিভিন্ন এলাকার মানুষ বিশেষ করে শ্রমজীবী, পথচারী এবং বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, শহরে পাবলিক টয়লেট না থাকায় তাদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে তাদের খোলা অস্বাস্থ্যকর এবং অনিরাপদ স্থানে যেতে হচ্ছে, যা শহরের পরিবেশ দূষণ বাড়াচ্ছে। পুরুষরা স্থানীয় মার্কেট, মসজিদের টয়লেট ও উন্মুক্ত স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করলেও নারীদের বেলায় সে সুযোগ নেই। ফলে তাদের কিডনিজনিত অসুখসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বাড়ছে নানা রোগ বালাইয়ের ঝুঁকি। এই পরিস্থিতি নিরসনে প্রশাসনের প্রতি পাবলিক টয়লেট স্থাপনের জন্য দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
মিষ্টি চৌধুরী নামের এক চাকরিজীবী নারী বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে বাইরে আসি। কয়েক ঘণ্টা পরপর প্রত্যেকেরই প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদনের প্রয়োজন পড়ে। শহরে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের বড়ই অভাব। যেগুলো রয়েছে সেগুলোও ব্যবহার অনুপযোগী। নারীদের ভোগান্তির পাশাপাশি আমি মনে করি বয়োজ্যষ্ঠরা আরও বিপাকে। অনেকের হাতে সময় সংকটের কারণে সেই মানুষকে বাধ্য হয়ে পথেঘাটে প্রাকৃতিক কার্য সারতে হচ্ছে, তাতে পরিবেশ যেমন দূষণ হচ্ছে তেমনি দৃষ্টিকটু। যেটা নারীদের পক্ষে সম্ভব না। সব কিছু মিলিয়ে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে গণশৌচাগারের একান্ত প্রয়োজন।
জান্নাতুল আইনুন নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, একটি মেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে জরুরি প্রয়োজনে টয়লেট ব্যবহার করতে হলেও তাকে বাধ্য হয়ে এক থেকে দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে বাসায় ফিরতে হয়, যা চরমভাবে মেয়েদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আর কোনও কারণে মার্কেটের কোনও টয়লেট ব্যবহার করতে হলে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়।
শহরের স্থানীয় বাসিন্দা বাহাদুর হোসেন বলেন, বাজারে বের হলে দেখা যায় শ্রমজীবী ও শহরের বাহিরে থেকে আগতরা টয়লেট হিসেবে খোলা স্থান ব্যবহার করছে। যা শহরের দূষণের মাত্রা বাড়াচ্ছে। যদি শহরে পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা থাকত তাহলে এই সমস্যার সমাধান অনেকটাই হতো। এটা শুধু পরিবেশগত দিক থেকে নয়, বরং মানুষের স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সমাজকর্মী মিনহাজ আহমেদ বলেন, ফেনী শহরে পাবলিক টয়লেটের অভাব একটি বড় সমস্যা। এর ফলে সাধারণ মানুষ, বিশেষত পথচারীরা প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পন্থা অবলম্বন করছেন। এটি শহরের সৌন্দর্য, জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যার সমাধানে ফেনী পৌরসভার উচিত শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো যেমন বাসস্ট্যান্ড, বাজার এবং জনসমাগমস্থলে পর্যাপ্ত পাব্লিক টয়লেট স্থাপন করা।
এদিকে চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘ সময় প্রস্রাব চেপে রাখার ফলে মূত্রনালির সংক্রমণসহ নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন অনেকেই। প্রস্রাবে ইউরিয়া এবং অ্যামিনো অ্যাসিডের মতো টক্সিন জাতীয় পদার্থ থাকার কারণে বেশিক্ষণ চেপে রাখার ফলে বিষাক্ত পদার্থ কিডনিতে পৌঁছে কিডনিতে স্টোন বা পাথর তৈরি করতে পারে। এছাড়া প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে ব্লাডার ফুলে যেতে পারে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দ্রুত নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব, আধুনিক, মানসম্মত ও পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেটের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদীরা।
এ প্রসঙ্গে ফেনী পৌর প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন বলেন, শহরের মধ্যে পাবলিক টয়লেটের যথাযথ ব্যবস্থা নেই। এখানে রাজাঝির দিঘীর পাড়ে একটি পাবলিক টয়লেট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু জায়গা সংক্রান্ত মামলা জটিলতার কারণে এটি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করার জন্য এবং এর জন্য উপযুক্ত জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ