রংপুর জেলায় দিন দিন কমছে আবাদি জমি। এ কারণে ভূমিহীন কৃষক সংখ্যা বেড়েছে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার আট উপজেলায় মোট কৃষক পরিবার প্রায় ৬ লাখ। এর মধ্যে ভূমিহীন কৃষক পরিবার রয়েছে ৯৫ হাজার ১৪০টি। পাঁচ বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ৯০ হাজারেরও কম। এ ছাড়া জেলায় প্রান্তিক কৃষক ২ লাখ ৪ হাজার ৪৯০, ক্ষুদ্র কৃষক ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬৭৩, মাঝারি কৃষক ৫০ হাজার ৭৫৪ এবং বড় কৃষক ৬ হাজার ৭৪ জন। কয়েক বছর আগে বড় কৃষকের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি।
রংপুর জেলা ভূমি ও গৃহহীন সংগঠনের প্রধান সংগঠক বামধারার প্রবীণ নেতা আনোয়ার হোসেন বাবলু বলেন, অধিকাংশ সময় ফসল ফলিয়ে লোকসানের মুখে পড়েন কৃষকরা। একপর্যায়ে লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে পেটের দায়ে জমি বিক্রি করে দেন। এ কারণেই ভূমিহীনের সংখ্যা বাড়ছে। অপরদিকে বড় বড় কৃষকের অনেকেই শহরমুখী হচ্ছেন। কেউ কেউ ছেলেমেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে জমি বিক্রি করে শহরে বাড়ি করছেন। আবার কেউ কেউ জমি বিক্রি করে ব্যবসা করছেন। আবার বড় কৃষকরা অনেক সময় নিজে জমি চাষ না করে জমি বর্গা দিচ্ছেন। ফলে বড় বড় কৃষকের সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, জেলায় এক ফসলি জমি রয়েছে ৮ হাজার ৭৭৩ হেক্টর। দুই ফসলি ৮৭ হাজার ৪৭২, তিন ফসলি ৯২ হাজার ৮৩২ ও চার ফসলি জমি ৮ হাজার ৯৬০ হেক্টর। পাঁচ বছর আগে জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১ হাজার ৪৯১ হেক্টর। বর্তমান তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৭ হেক্টরে। পাঁচ বছর আগে জেলার জনসংখ্যা ছিল ৩০ লাখ ৭২ হাজার ১০৬ জন। এখন বেড়ে হয়েছে ৩২ লাখ ২৬ হাজার ২৮৯ জন। ওই সময়ে খাদ্যশষ্য উৎপাদন হতো ১০ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন। বার্ষিক চাহিদা ছিল ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৪ মেট্রিক টন। চাহিদা মিটিয়ে খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত ছিল ৪ লাখ ১ হাজার ৫৫০ টন। এখন চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়ে ৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪৯৮ টন। উৎপাদন কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ৪ হাজার ৭৭৮ টন। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন তেমন বাড়েনি। এক সময় রংপুরের উদ্বৃত্ত ফসল দিয়ে দেশের অন্যান্য জেলার চাহিদা মেটানো হতো। বর্তমানে যে ফসল উৎপাদন হয় তা দিয়ে জেলার ৩২ লাখ মানুষের চাহিদা মিটছে। তবে প্রতি বছরই আবাদি জমি কমায় অদূর ভবিষ্যতে খাদ্যঘাটতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আবাসনও বেড়েছে। আবাসনসংকট সমাধান, ফসলি জমিতে অবকাঠামো গড়ে ওঠাসহ বিভিন্ন কারণে আবাদি জমি কমেছে। এ ছাড়া বড় কৃষকরাও জমি বিক্রি করে শহরমুখী হচ্ছেন।