সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের পারিতোষিক (বেতন-ভাতা), ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার সংক্রান্ত দুটি আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের নয় আইনজীবী ও চার আইনের শিক্ষার্থীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদনটি দাখিল করেন। রিটে আইন দুটি অসাংবিধানিক ঘোষণার নির্দেশনা চাওয়ার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের প্রত্যেক বিচারকের অধীনে একজন করে ‘মামলা গবেষণা কর্মকর্তা’ নিয়োগের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব, লেজেসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিব এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে বিচারপতি ফাতেমা নজীবের নেতৃত্বাধীন হাই কোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটির শুনানি হতে পারে বলে জানান রিটকারীদের আইনজীবী।
রিটে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২১ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২৩ অনুযায়ী বিচারকদের বেতন, পেনশন ও বিশেষাধিকার এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। একই সঙ্গে তা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করছে। এতে আরও বলা হয়েছে, সংবিধানে প্রদত্ত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার বিভাজনের নীতিকে উপেক্ষা এবং সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করে সংসদ আইন দুটি প্রণয়ন করেছে। এর ফলে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিচারকাজ সম্পাদনের সক্ষমতা ব্যাহত হচ্ছে। তাই, আইন দুটি কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।
ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন কাঠামো তুলে ধরে রিটে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন কাঠামো দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় অনেক কম।
বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বেতন ১ লাখ ১০ হাজার টাকা। আপিল বিভাগের বিচারপতি পান ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। আর হাই কোর্টের বিচারপতি ৯৫ হাজার টাকা বেতন পান। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মালদ্বীপে প্রধান বিচারপতির বেতন সবচেয়ে বেশি। দেশটিতে প্রধান বিচারপতি প্রায় ৭ লাখ এবং অন্যান্য বিচারকরা পৌনে ৭ লাখ টাকা বেতন পান বলে বলে উল্লেখ করা হয়েছে রিটে। এর পরেই পাকিস্তানের অবস্থান।
দেশটিতে প্রধান বিচারপতির বেতন ৫ লাখ ১৭ হাজার টাকা এবং অন্যান্য বিচারকদের বেতন পৌনে ৫ লাখা টাকা। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ৩ লাখ ৮৯ লাখ টাকা এবং অন্যান্য বিচারকরা ৩ লাখ ৪৭ লাখ টাকা বেতন পান বলে রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলা গবেষণা কর্মকর্তার বিষয়ে রিটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের প্রাতিষ্ঠানিক অক্ষমতা ও গবেষণার ঘাটতি দূর করতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ভারত, অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকদের মতো বাংলাদেশেও প্রত্যেক বিচারকের অধীনে অন্তত একজন করে মামলা গবেষণা কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা করা উচিত। এ ব্যবস্থা না থাকায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা অতিরিক্ত মামলার ভারে জর্জরিত। এর ফলে বিচারের গুণগত মান ও বিচার প্রশাসনের কাজের গতি ব্যাহত হচ্ছে।