রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আ-আল মামুন বলেছেন, ‘হতাশাগ্রস্ত আমি ঝোঁকের বশে এমন কিছু লিখি যা লেখা উচিত হয়নি।’ মঙ্গলবার দুপুরে বোরখা নিয়ে বির্তকিত মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিবাদের পর এ কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
দুঃখ প্রকাশ করে নিজের ফেইসবুক দেওয় পোস্টে তিনি বলেন, আমি এক এগারোর সরকারের বিরুদ্ধে মিছিল করে জেল খেটেছি। ২০১৩ সাল থেকে নানাভাবে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে জুলুম-অত্যাচারের ক্রিটিক করেছি ২০২৪ পর্যন্ত, ফেসবুকে এবং বইপত্রে। সে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিলাম। শিক্ষক হিসেবে আন্দোলনকারীদের আগলে রেখেছিলাম। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতনমুহূর্তে স্বপ্ন দেখেছিলাম সম্পূর্ণ নতুন এক বাংলাদেশের। কিন্তু এরপরে বহু ঘটনা ঘটেছে, যেমন চেয়েছিলাম, বাংলাদেশ সেদিকে হাঁটেনি। ব্যাপক হতাশা কাজ করে আমার মধ্যে। হতাশাগ্রস্ত আমি ঝোঁকের বশে এমন কিছু লিখি যা লেখা উচিত হয়নি। তা আমি লিখতে চাইওনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিস রিডিং হবে বুঝতে পেরে সঙ্গে সঙ্গে আমি পোস্টটি সরিয়ে নিই। পোশাক বিষয়ে আমার ভাবনা পরিষ্কার- পোশাকের কারণে আমি কাউকে বড় বা ছোট করে দেখি না। ‘হিজাব’ ডিফেন্ড করার মতো অনেক পোস্ট পাবেন আমার। এ শিক্ষা আমার ‘সন্ত্রাসবিরোধী অনন্ত যুদ্ধ’র ক্রিটিক করতে গিয়েই হয়েছে। ফলে আপনারা যা ভাবছেন- সে রকম কোন উপহাস বা তাচ্ছিল্য আমি করি না। এক মুহুর্তে পোষ্ট করে পারসোনালাইজ করেছিলাম- এ নিয়ে আরও ভাবনা-চিন্তা করার জন্য। কিন্তু সেই মুহুর্তেই কেউ এ পোস্ট স্ক্রিনশট নিয়ে ছড়িয়ে দেয়। খেয়াল করলে দেখবেন, ওই পোস্টে কোন লাইক, কমেন্ট, শেয়ার কিছু নাই, কোন ইন্টারএকশন নাই! তারপরও কেউ আঘাত পেয়ে থাকলে, আমি দুঃখিত।’
এরআগে, সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন নবনির্বাচিত রাকসু হল সংসদ প্রতিনিধিদের শপথ অনুষ্ঠানে বোরখা পড়া ছবি পোস্ট করে কিছুক্ষণ পর সেটা সরিয়ে নেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পোস্টের স্ক্রিনশট বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্ক শুরু হয়। রাতেই পর্দা অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে বহিষ্কারের দাবিও জানানো হয়। ২৮ অক্টোবর সকালে এ মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিভাগ ও প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি দেয় রাকসু প্রতিনিধিরা। প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি তদন্ত সাপেক্ষে তার শাস্তির দাবিও জানান তারা।
আ-আল মামুন ডিলিট করা পোস্টের স্ক্রিনশটে লেখা ছিল, ‘এই ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আমি এন্ডর্স করছি। কাল আমি এরকম ব্যক্তিগত স্বাধীনতা পরে ও হাতে নিয়ে ক্লাসে যাবো। পরবো টু-কোয়াটার, আর হাতে থাকবে মদের বোতল। মদ তো ড্রাগ না! মদ পান করার লাইসেন্সও আমার আছে! শিবির আইসেন, সাংবাদিকরাও আইসেন!’ (নিচে রাকসু হল সংসদের নির্বাচিত নারী প্রতিনিধিদের দুটি ছবি যুক্ত করেন তিনি)
বিডি-প্রতিদিন/আশফাক