জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নৈতিকতা, রাজনীতি ও দায়বদ্ধতা’ শীর্ষক দিনব্যাপী জাতীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার বাংলাদেশ ফিলসফিক্যাল সোসাইটি (বিপিএস)-এর উদ্যোগে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের আয়োজনে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম আমানুল্লাহ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমীন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সাবিনা শরমীন বলেন, ‘একাত্তরে স্বাধীনতার পর আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলাম, কিন্তু বাস্তবে তার চরম বিচ্যুতি ঘটেছে। এজন্যই কয়েক দশক পরপর আমরা নতুন করে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা করি। ৫ আগস্ট আমাদের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ মোড় এনেছে—নতুন প্রজন্মকে এখন পথ চলা শুরু করতে হবে, কিন্তু কোথায় থামতে হবে সেটিও জানতে হবে। দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা থেকেই সঠিক চেতনা ও বোধের উন্মেষ সম্ভব।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হারুন রশীদ। তাঁর প্রবন্ধের শিরোনাম ছিল—‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রদর্শন: গণতন্ত্রের পোশাকে রাজনৈতিক নিরঙ্কুশতন্ত্র’।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে গণতান্ত্রিক কাঠামোর দাবি করলেও, বাস্তবে এটি নিরঙ্কুশতন্ত্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখানকার বহুদলীয় ব্যবস্থা, নির্বাচন ও রাষ্ট্রযন্ত্রের নিরপেক্ষতার ঘাটতি প্রকৃত গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করছে। সংবিধানে জনগণের সার্বভৌমত্বের কথা বলা হলেও রাজনৈতিক ভারসাম্যহীনতা ও দুর্বল প্রতিষ্ঠানসমূহ গণতন্ত্রকে শুধুই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিজস্ব স্পষ্ট দার্শনিক ভিত্তির অভাব রয়েছে।’
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিপিএসের সভাপতি অধ্যাপক শাহ্ কাওসার মুস্তাফা আবুলউলায়ী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক হোসনে আরা বেগম এবং জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিপিএসের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ হাফিজুল ইসলাম।
চারটি অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানের পণ্ডিতবর্গ নৈতিকতা, রাজনীতি ও দায়বদ্ধতা বিষয়ক মোট ১৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে দর্শন, নীতিবিদ্যা ও যুক্তিবিদ্যার গুরুত্ব তুলে ধরে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এগুলোর ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, গবেষক ও অন্যান্য অতিথিরা এতে অংশ নেন।
বিডি প্রতিদিন/আশিক