বসুন্ধরা শুভসংঘের সহায়তায় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সানজিদা আক্তার রুবিনা এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখা যায়, শ্রুতিলিখন পদ্ধতিতে ১০৫ নম্বর কক্ষে অন্য পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে পরীক্ষা দিচ্ছে রুবিনা। সে উত্তর বলে দিচ্ছে আর তা শুনে খাতায় লিখছে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইফা ইসলাম।
রুবিনা নান্দাইল উপজেলার মুশলী বালিকা বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী।
বসুন্ধরা শুভসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রবিনা বলেন, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট ইজিবাইকে স্কুলে যাওয়ার সময় ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে বাসচাপায় গুরুতর আহত হয়েছিলাম। এ দুর্ঘটনায় একজন মারাও যান। আমি প্রাণে বেঁচে গেলেও দুটি চোখ হারাই। একসময় হতাশ হয়ে পড়ালেখা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শিক্ষক ও প্রতিবেশীদের সাহসে পড়ালেখা চালিয়ে যাই। তবে বিশেষ ধন্যবাদ দেব বসুন্ধরা শুভসংঘকে। তারা আমাকে প্রতি মাসে টাকা দিচ্ছে। এই টাকাটা পেয়ে অনেক সাহস হয়েছে। পরে সিদ্ধান্ত নিই পরীক্ষা দেওয়ার। আজ সেই স্বপ্ন সার্থক হতে যাচ্ছে।
শ্রতিলিখনের কাজ করতে পেরে উচ্ছ্বসিত মুশলী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইফা ইসলাম বলেন, রুবিনা আপু বলে দেন আর আমি খাতায় লিখি। তাকে সাহায্য করতে পেরে আমার ভালো লাগছে। এটা আমার জন্য একটা বড় পাওনা। আপু এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করলে আমিও খুশি হবো।
এদিকে রুবিনা পরীক্ষা দিচ্ছে আর তার বাবা রুবেল মিয়া কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনায় আমার সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। মেয়েকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখতাম। মেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চোখ হারালে সেই স্বপ্ন ভেঙে যায়। পরে মেয়ের সাহস দেখে আমি আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
মুশলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহজাহান ভুইয়া বলেন, ‘একটি দুর্ঘটনায় সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রুবিনার সাহসিকতার কাছে সবই ভেস্তে গেছে। এখন সে আরো বহুদূর এগিয়ে যাবে এই কামনাই করি।’
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, এই অদম্য সাহসিকতার জন্য রুবিনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। এখন থেকে তার প্রতি আলাদা নজর থাকবে। এটা হবে সবার জন্য অনুকরণীয়।