‘জীবনযুদ্ধে হাইর্যা যাইতে লইছলাম। পড়বাম কিবায় আর খাইয়ামই বা কিবায়। অহন দেহি আমরার পাশে খাড়াইছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। তারা আমরারে প্রশিক্ষণ দিয়া একটা সেলাই মেশিন দিছে।
অহন একটা মেশিন দিয়াই আয় কইরা দুই বইনে পড়বাম সেই সাথে সংসারও চলব।’ বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন পেয়ে কথাগুলো বলছিল ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের চৌরাস্তা এলাকার রিকশাচালক তোতা মিয়ার মেয়ে তামান্না আক্তার ও তুলি আক্তার। উপজেলা সদরে অবস্থিত সমূর্ত্ত জাহান মহিলা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তারা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কলেজে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অনেকের সঙ্গে তাদের হাতেও সেলাই মেশিন তুলে দেওয়া হয়।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে দরিদ্র পরিবারের নারীদের হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন। তামান্না ও তুলির মা মনোয়ারা বেগম, বাবা তোতা মিয়াও সেদিন এসেছিলেন। সেলাই মেশিন পেয়ে তাঁরা অনেক খুশি। তামান্না বলে, বাবা অসুস্থ তার পরও রিকশা চালাতে হয়।
এক দিন রিকশা না চালালে খাবার জোটে না। নিজেদের জমিজমা বলতে কিছুই নেই। এখন আর বাবার আয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। নিজেরাই সেলাই মেশিন দিয়ে আয় করে পড়ালেখা চালানো ছাড়াও সংসারের ব্যয় মেটানো যাবে। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘এই রকম একটা পথ খুঁজছিলাম, কিন্তু লজ্জা-শরমে কারো কাছে বলতে পারছি না।
অবশেষে আল্লাহর ইশারায় বসুন্ধরা শুভসংঘ আমরার বাঁচার পথ দেখাইয়া দিছে।’ সেলাই মেশিন নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার সময় দুই বোনের আত্মহারা খুশি ছিল সবার কাছেই দৃশ্যমান। এই সেলাই মেশিনটিই যে তাদের অবলম্বন হবে, তা বোঝাই যাচ্ছিল দুই বোনের মুখ দেখে। মেশিন নিয়ে যাওয়ার সময় মনে হচ্ছিল, স্বপ্ন ধরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে তারা। দুই বোন দুই দিকে মেশিনটি ধরে বলছিল, আয় বইন আয় বাড়িত গিয়া সকলরে একসাথে কইর্যা মোবাইলে একটি ছবি তুলবাম।