এখন ছুটি বা উৎসব মানেই কক্সবাজারে চুট। বাংলার নানা প্রান্ত থেকে পরিবার নিয়ে অবকাশ কাটানোর ঠিকানাই কক্সবাজার। কয়েক বছর আগে এ অবস্থা ছিল না। কারণ ছিল কভিড-১৯ ও রাজনৈতিক অস্তিরতা। এ অবস্থার শেষ হওয়ায় ‘ব্যস্ত’ হয়ে উঠেছে কক্সবাজার। চলতি মৌসুমে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারে ভিড় করছে।
কিন্তু এ ভিড়ের সঙ্গে বেড়েছে ভোগান্তিও। অনেকেই কাঙ্ক্ষিত আবাসন পাচ্ছে না। আবার হোটেলগুলোতে ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ থাকছে সব সময়। অভিযোগগুলোর বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, ‘পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ট্যুরিস্ট পুলিশের ৮৫ জন সদস্যকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করলেও মাঝে মাঝে নানা দুর্ঘটনা বা অনিয়মের খবর আসে। আর এগুলো সমাধানের চেষ্টা করি। পর্যটকদের হয়রানি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে সম্প্রতি আট তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।’
এ ব্যাপারে ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘পর্যটকদের আনন্দ-বিনোদন, থাকা-খাওয়া ও ঘোরাফেরা পুঁজি করে গলাকাটা বাণিজ্য করেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। আর তাঁদের জন্য বদনাম হয় কক্সবাজারের সৎ ব্যবসায়ীদের। পর্যটন মৌসুম শুরু হলেই হোটেল-মোটেল, গাড়ি পার্কিং, যাতায়াত, দ্রব্যসামগ্রী, খাবার রেস্তোরাঁসহ পর্যটনসংশ্লিষ্ট নানা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আদায় করা হয় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য। অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করলে অনেক সময় দুর্ব্যবহারের শিকারও হতে হয় পর্যটকদের।’ এজন্য তিনি প্রশাসনের পরিকল্পনার অভাব এবং অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানান, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত রুম ভাড়া কিংবা খাবারের মূল্য আদায়ের অভিযোগ তদারকি করতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছেন।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘হোটেল-মোটেল জোনে তারকামানের হোটেলসহ নানা ক্যাটাগরির ৫ শতাধিক হোটেল রয়েছে। এসব আবাসনে দৈনিক ১ লাখ ৩০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কিছু সময় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পর্যটক আসছে। অনেকে কাঙ্ক্ষিত মানের হোটেল বা মোটেল পায় না। তখন সাময়িক সমস্যা হয়।’
হোটেল-মোটেল জোনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রুমস্বল্পতার অজুহাতে হোটেল-মোটেলগুলোর রুম ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ আদায় করা হচ্ছে। আগে যে রুম ভাড়া ১ থেকে ২ হাজার টাকা ছিল, তা পর্যটন মৌসুমে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়।
এদিকে সন্ধ্যার পর থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বেশির ভাগ মোড়ে সড়কবাতি জ্বলে না। অপরাধীরা এর সুযোগ নেয়। শহরে অন্তত ১৫-২০টি স্পট দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েকটি গ্রুপে নিয়ন্ত্রিত ছিনতাইকারীরা। গেল কয়েকদিনে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কসহ পর্যটন জোনে কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। খোদ হোটেল-মোটেল জোনে গুলিতে নিহত হয়েছেন খুলনার এক কাউন্সিলর।
সৈকতে হকার, ভ্রাম্যমাণ যৌনকর্মী, হিজড়াদের উৎপাত তো আছেই; কিটকট (ছাতা) ব্যবসায়ীদেরও পর্যটকদের সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগ রয়েছে।
কক্সবাজার পুলিশের মুখপাত্র ও ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থানের পর পুলিশি কার্যক্রমে কিছুট ভাটা পড়লে অপরাধী চক্র মাথা চড়া দিয়ে ওঠে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অপরাধ নির্মূলে পুলিশ কাজ করছে।’