ভবিষ্যতের প্রযুক্তিতে কে ভালো? আমেরিকা না কি চীন? এ নিয়ে জল্পনাকল্পনাও তুঙ্গে। বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) কোম্পানি, ওপেনএআই (OpenAI), আমেরিকান। অন্যদিকে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী ডিপসিকের (DeepSeek) মাধ্যমে প্রযুক্তি বিশ্বে ব্যাপক সাড়া ফেলেছ। এর উৎপাদিত মডেলগুলো যেমন ভালো এবং তেমন সস্তা। কিন্তু প্রশ্ন হলো- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে কে এগিয়ে? নতুন প্রজন্মের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিশ্বে আদতে কে নেতৃত্ব দিচ্ছে?
ইউরো নিউজের একটি নতুন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এগিয়েছে। আর প্রযুক্তি বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড় ‘আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক’ এবং এতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন তাদের আধিপত্য হারাচ্ছে। জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (GenAI) নেতৃত্বের দৌড়ে বা বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতা আরও বেশি জোরদার হয়েছে। পাশাপাশি নতুন তথ্য বলছে, এই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এখন শুধু দুটি দেশ নেই।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজকের বিশ্বে কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তায় (এআই) নেতৃত্ব দিচ্ছে, তবে চীন তাদের কর্মক্ষমতার ব্যবধান কমিয়ে আনছে এবং ইউরোপও উন্নতি করছে। গেল বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন ৪০টি উল্লেখযোগ্য এআই মডেল তৈরি করেছে, যেখানে চীন ১৫টি এবং ইউরোপ তিনটি তৈরি করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-এর মডেল উৎপাদনের সংখ্যায় পিছিয়ে থাকলেও ২০২৫ সালের স্ট্যানফোর্ড কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সূচক বেশ কয়েকটি মানদণ্ড বিবেচনা করে দেখেছে, দুটি কর্মক্ষমতা সূচকে চীনের এআই মডেলগুলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সমতুল্য অবস্থানে পৌঁছেছে; ম্যাসিভ মাল্টিটাস্ক ল্যাঙ্গুয়েজ আন্ডারস্ট্যান্ডিং (MMLU), যা এআই-এর জ্ঞান এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা পরীক্ষা করে এবং হিউম্যানইভাল (HumanEval), যা কোড তৈরির সক্ষমতা মূল্যায়ন করে।
স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রতিবেদনে লেখকরা জানিয়েছেন, ‘এই দৌড় আগের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন এবং কারও কাছেই স্পষ্ট নেতৃত্ব নেই।’ এ ফলাফল এমন সময়ে এসেছে যখন বিশ্ব নেতারা বলছেন যে, এআই দৌড়ে জয়ী হওয়া জাতীয় নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য, ব্যবসা ও প্রযুক্তির অগ্রগতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এদিকে ওপেনএআই (OpenAI), গুগল (Google) এবং ডিপসিকের (DeepSeek) মতো কোম্পানিগুলো অনেকের মধ্যে সেরা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
এক নজরে
২০২২ সালে যখন ওপেনএআই-এর চ্যাটজিপিটি (ChatGPT) জনপ্রিয়তা পায়, তখন কেবল তাদের এবং গুগলের হাতে এআই প্রযুক্তি ছিল। তবে আজকের চিত্রটা ভিন্ন, মেটা (Meta), ইলোন মাস্কের এক্সএআই (xAI) এবং অ্যানথ্রোপিকের (Anthropic) মতো অন্য মার্কিন কোম্পানিগুলোও এগিয়ে আসছে। অন্য একটি মানদণ্ডে দেখা গেছে, চীনের ডিপসিক আর১ (DeepSeek R1) মডেল ওপেনএআই এবং গুগলের মডেলগুলোর সবচেয়ে কাছাকাছি স্থান পেয়েছে। ডিপসিক জানুয়ারিতে আর১ নিয়ে আসার পর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। কোম্পানিটির দাবি, ওপেনএআই-এর প্রতিদ্বন্দ্বী চ্যাটজিপিটির মতোই ভালো পারফর্ম করে, তবে খরচ কম।
২০২৪ সালের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মেশিন লার্নিং মডেলগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবদানকারী ছিল ওপেনএআই (সাতটি মডেল), গুগল (ছয়টি) এবং চীনের আলিবাবা (চারটি)। ফ্রান্সের মিস্ট্রাল এআই (Mistral AI) তিনটি মডেল নিয়ে অষ্টম স্থানে ছিল।
সর্বাধিক পেটেন্ট
আরেকটি বিষয়ে দেখা যাচ্ছে, এআই দৌড় ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে, তা হলো এআই প্রকাশনা এবং পেটেন্টের সংখ্যা, যেখানে চীন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক এগিয়ে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৩ সাল পর্যন্ত তারা এআই পেটেন্টে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যা মঞ্জুরির প্রায় ৭০ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়া দ্বিতীয় স্থানে এবং লুক্সেমবার্গ তৃতীয় স্থানে রয়েছে, এরা সবাই শীর্ষ এআই পেটেন্ট উৎপাদনকারী দেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী ক্রমেই এআই মডেলের উন্নয়ন হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকেও এআই মডেলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে।
তথ্যসূত্র : ইউরোনিউজ