ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা ফুটবলার হামজা দেওয়ান চৌধুরী বাংলাদেশের জাতীয় দলে খেলার পর, শুধু ফুটবলে নয়, পুরো দেশের ক্রীড়াঙ্গনেই ইতিবাচক পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। তার এই যোগদান প্রবাসী ক্রীড়াবিদদের বাংলাদেশের হয়ে খেলার নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে।
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ইতোমধ্যে দেশের সব ক্রীড়া ফেডারেশনকে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রবাসী ক্রীড়াবিদ চিহ্নিত করে তাদের বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলানোর উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছে।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এই প্রবাসী উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও একে স্থায়ী সমাধান হিসেবে দেখছেন না। রাজধানীর পল্টনে শহীদ নূর হোসেন ভলিবল স্টেডিয়ামে স্বাধীনতা দিবস ভলিবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের হয়ে খেলছে, সামিত সোমও আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে প্রবাসী ক্রীড়াবিদদের যুক্ত করা সাময়িক সমাধান। স্থায়ী সমাধান হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় তৈরি করা।”
তিনি জানান, তৃণমূল থেকে প্রতিভাবান খেলোয়াড় খুঁজে এনে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যারা ক্রীড়াঙ্গনে সাফল্য পাচ্ছেন, তাদের সুযোগ করে দিতে চায় সরকার।
এদিকে, ক্রীড়া ফেডারেশন পুনর্গঠনের বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ২০ এপ্রিলের মধ্যে সার্চ কমিটিকে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিলেও কমিটি সময় চেয়েছে। উপদেষ্টা জানান, “আমাদের লক্ষ্য দ্রুত ফেডারেশন পুনর্গঠন। তবে সেখানে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আগের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কারণে ক্রীড়াঙ্গন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যেমন শুটিং ফেডারেশনের অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা।”
তিনি আরও বলেন, “সার্চ কমিটিকে তাগাদা দেওয়া হচ্ছে এবং সময় বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা করা হবে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলে ক্রীড়াঙ্গনে প্রাণ ফিরে আসবে।”
স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠনগুলোকে সক্রিয় করতে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কমিটি গঠনের কথাও জানান উপদেষ্টা। “পূর্বে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আধিপত্যে স্থানীয় ক্রীড়া কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। এবার আমরা ক্রীড়া অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন কমিটি করেছি,” বলেন তিনি।
তৃণমূল ক্রীড়ার প্রসারে জেলা পর্যায়ে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “ঢাকা কেন্দ্রিক না রেখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় খেলা আয়োজন করব, যাতে সারা দেশের খেলাধুলার জাগরণ হয়।”
ভলিবল ফেডারেশন সম্প্রতি পুনর্গঠনের পর স্বাধীনতা দিবস টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে। উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন, “ভবিষ্যতে ভলিবল আর স্থবির থাকবে না।”
তবে ভলিবল ও কাবাডি স্টেডিয়াম সংস্কারের পরও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন সম্ভব না হওয়ায় অসন্তোষ রয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের চেয়ারম্যান জানান, ভবিষ্যতে ইনডোর সুবিধা উন্নত করা হবে।
ফতুল্লা স্টেডিয়ামেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দীর্ঘদিন বন্ধ। ক্রীড়া উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বিসিবির উদ্যোগে এর সংস্কার কাজ চলছে এবং সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
সার্বিকভাবে প্রবাসী ক্রীড়াবিদদের যুক্ত করার পাশাপাশি তৃণমূল উন্নয়নের সমন্বয়ে ক্রীড়া খাতের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম