ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ মিশরের সিনাই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সেন্ট ক্যাথারিন মঠের আইনি মর্যাদা ও ধর্মীয় গুরুত্ব রক্ষায় একমত হয়েছে গ্রিস ও মিশর। বুধবার কায়রোতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এক যৌথ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন।
৬ষ্ঠ শতকে প্রতিষ্ঠিত এই মঠটি এখনও তার মূল ধর্মীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। খ্রিস্টান, মুসলিম ও ইহুদি—তিন ধর্মের অনুসারীরাই মঠটিকে সম্মানের চোখে দেখে। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, এই স্থানেই হজরত মুসা (আ.) ঈশ্বরের কাছ থেকে দশটি নির্দেশনা পেয়েছিলেন।
সম্প্রতি এক মিশরীয় আদালতের রায়ে মঠের আশেপাশের কিছু জমি—যেমন আঙুর ক্ষেত ও বাগান—অবৈধ দখলের অভিযোগে মঠ কর্তৃপক্ষকে সেগুলো ছেড়ে দিতে বলা হয়। দীর্ঘদিন ধরেই সেসব জমি মঠের ব্যবহারাধীন ছিল। এই রায়ের পর গ্রিস ও মিশরের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনার সূত্রপাত হয়।
গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ গেরাপেত্রিতিস বলেন, আমরা সম্মত হয়েছি—অতি দ্রুত এই ঐতিহাসিক মঠের আইনি অবস্থান ও ধর্মীয় অধিকার নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করব। এর গ্রিক অর্থোডক্স ধর্মীয় পরিচয় অক্ষুণ্ণ রাখাও আমাদের লক্ষ্য।
মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাদর আবদেলাত্তি জানান, আদালতের রায় মঠের আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় গুরুত্বের কোনো ক্ষতি করেনি। মঠের সন্ন্যাসীরা আগের মতোই ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারবেন।
বহুদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা গ্রিস ও মিশর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে বিভিন্ন বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করছে।
ঐতিহাসিক এই মঠটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় কেন্দ্রই নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক ধনভাণ্ডারও। এখানে রয়েছে খ্রিস্টান ধর্মের প্রাচীনতম কিছু পান্ডুলিপি, যা বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ধর্মীয় গ্রন্থাগারগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত।
মঠটি যে স্থানে অবস্থিত, সেখানেই ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী একটি জ্বলন্ত ঝোপের ভেতর থেকে মহান আল্লাহপাক হজরত মুসাকে (আ.) আহ্বান করেছিলেন। সেই ইতিহাস আজও এটিকে একটি পবিত্র তীর্থস্থানে পরিণত করেছে।
গ্রিস ও মিশরের যৌথ পদক্ষেপে সেন্ট ক্যাথারিন মঠের ঐতিহ্য ও মর্যাদা আগামীতেও অক্ষুণ্ণ থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল