বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সদ্য সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ একটি গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফারুক আহমেদ জানান, কীভাবে কোটি কোটি টাকা অন্য খাতে চলে যাচ্ছিল এবং কেন তাকে সভাপতির পদ থেকে সরানো হলো।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা ফারুক আহমেদকে সরিয়ে দেওয়ার সঙ্গে দুর্নীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করলেও ফারুক আহমেদকে পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘জলঘোলা’ করার অভিযোগ করেছেন। এই অভিযোগ প্রসঙ্গে ফারুক আহমেদ বলেন, ক্রীড়া উপদেষ্টা তাকে সভাপতির পদে বসানোর আগে নিশ্চয়ই অনেকের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং বুঝেছিলেন যে তার মাধ্যমে দুর্নীতি সম্ভব নয়। তিনি উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানান। তবে তিনি মনে করেন, দল ভালো না খেলার এবং গত তিন-চার মাসের বিভিন্ন ইস্যুর কারণে 'উপরের মহলের চাপে' তাকে আর 'কন্টিনিউ' করতে চাওয়া হয়নি।
ফারুক আহমেদ জানান, বিসিবিতে তিনি নতুন কোনো পরিচালক পাননি এবং পুরনো পরিচালকরাই তার জন্য সমস্যা তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, একটি দলের মধ্যে নয়জন বনাম একজন হয়ে গিয়েছিল। বোর্ডের দীর্ঘদিনের কর্মচারীদের অসহযোগিতাও তার কাজের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ফারুক আহমেদ আক্ষেপ করে বলেন, আমি বাঁকা রাস্তাগুলা একটু কম বুঝি। সারাজীবন চেষ্টা করেছি সোজা রাস্তায় গিয়ে সততার সঙ্গে কাজ করতে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে তিনি সবার সহযোগিতা পাবেন কিন্তু এটি তার ভুল ধারণা ছিল। তিনি যখন বুঝতে পারলেন যে উপদেষ্টার সমর্থন কমছে, তখন প্রতিপক্ষরা পাকা খেলোয়াড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।
তার স্বপ্ন ছিল মাঠের উন্নতি, আম্পায়ারদের বেতন বৃদ্ধি, বিসিবির চাকুরেদের পদোন্নতি এবং একটি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠন করা। যেখানে ২০ কোটি টাকা থাকবে। কিন্তু তার কোনো দল না থাকায় ভালো কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন, যখন অনেক দিন পরে মনে হলো কাজটা হয়েছে কিনা, দেখি যে হয়নি। ওই অবস্থায়ই আছে।
ফারুক আহমেদ বিপিএল চলাকালীনই বুঝতে পারেন যে তার সহকর্মীরা তার পিছু লেগেছেন। তিনি বলেন, বিপিএল থেকে আমি ৮০ শতাংশ বুঝে যাই যে এঁরা আমাকে সফল হতে দিবে না। তারা অপেক্ষা করছিল পরশু দিনটা (২৯ মে) কবে আসবে। তিনি উদাহরণ হিসেবে থিম সংয়ের প্রচার না পাওয়া এবং পূর্ববর্তী বিপিএলগুলোর ব্যাংক গ্যারান্টি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি’র ক্ষেত্রে অনিয়মের কথা উল্লেখ করেন। তার সময়ে গত বছরের ৩০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, যা কেউ বলছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ফারুক আহমেদ বিশ্বাস করেন যে তার অপসারণ একটি সাজানো নাটক ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, অনাস্থার চিঠিতে সই করা তিন জন পরিচালক সেদিন দেশে ছিলেন না এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নামও ভুল লেখা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, তাকে নোটিশ দেওয়ার বদলে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিচালক পদ কেড়ে নেওয়া হয়।
চন্দিকা হাথুরেসিংহের চাকরিচ্যুতি নিয়ে মাহবুব আনামের বক্তব্যের সমালোচনা করে ফারুক আহমেদ জানান, হাথুরেসিংহে একজন ক্রিকেটারকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন। তিনি নাসুমের সঙ্গে কথা বলে এবং নিকোলাস লি’র কাছ থেকে লিখিত প্রমাণ সংগ্রহ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন। তিনি আরও বলেন, হাতুরাসিংহে বিনা নোটিশে বোর্ডকে না জানিয়ে ৪৫ দিনের জায়গায় ১১৫ দিন ছুটি কাটিয়েছিলেন।
বিসিবির এফডিআর অন্য ব্যাংকে স্থানান্তর নিয়েও ফারুক আহমেদ কথা বলেছেন। তিনি বলেন, টাকা ট্রান্সফার হয়েছে ভালো ব্যাংকে। যাঁদের সইয়ে এটি হয়েছে তারা বলেছে, ‘আমি জানি না।’ তিনি জানান, মোট ২৩৮ কোটি টাকা ১৩টি ব্যাংকে স্থানান্তরিত হয়েছে এবং এটি বোর্ডের ভালো করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত হয়েই বলছি, আমার বিরুদ্ধে ওদের ১০টি টিম কাজ করেছে।
নিজের বিদেশ সফর নিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, বেশিরভাগ সফরই ছিল আইসিসি ও এসিসির মিটিংয়ে অংশ নেওয়া। তবে তিনি দুবাইয়ে মল্লিকের সঙ্গে বৈঠকের খবর অস্বীকার করেন এবং বলেন, যদি মল্লিকের সঙ্গে আমার কথা হতোই, তাহলে আজ আপনাকে সাবেক সভাপতি হিসেবে সাক্ষাৎকার দিতে হত না। সেটি আমি বর্তমান সভাপতি হিসেবেই দিতাম। তিনি জানান, তাকে বারবার মল্লিকের সঙ্গে কথা বলার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি রাজি হননি।
তিনি আরও অভিযোগ করেন, ৫ আগস্ট রাতে বিসিবি থেকে দুটো স্যুটকেসে করে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র বের করা হয়েছে, যার ভিডিও ফুটেজ আছে। তিনি নিশ্চিত, দুদক এসব তদন্ত করে দেখবে।
ফারুক আহমেদ তার সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ক্রিকেটের গভীরে প্রোথিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বর্তমান সভাপতির জন্য শুভকামনা জানান। তার মতে, তাকে সরানো হয়েছিল কারণ তিনি দুর্নীতিকে টার্গেট করেছিলেন এবং তার উপস্থিতিতে তাদের অপকর্ম প্রকাশ্য হয়ে যেত।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল