ভারত বা পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের হকি ম্যাচ ঘিরে কখনো উত্তেজনা লক্ষ করা যায়নি। কারণ ফুটবল বা ক্রিকেটে জয় এলেও কখনো হকিতে দুই দেশকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। সুতরাং হারই যখন সম্বল তখন হকি ঘিরে দর্শকরা উন্মাদনায় মাতবে কেন? পাকিস্তানের বিপক্ষে লাল-সবুজের দল জয়ের খাতা খুলতেই পারছে না। হকিতে দুই দেশ প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৭৮ সালে ব্যাংকক এশিয়ান গেমসে। রেকর্ড সংখ্যক গোল খেয়ে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু। বাংলাদেশ জাতীয় দল তো আর কখনো হকির বিশ্বকাপ বা অলিম্পিক খেলেনি। তাই পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই এশিয়া কাপ বা এশিয়ান গেমসেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
আগামীকাল ঢাকায় তিন ম্যাচের যে সিরিজটি শুরু হচ্ছে তাও এশিয়া কাপকেন্দ্রিক। ভারতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপ বয়কট করেছিল পাকিস্তান। এতে বাংলাদেশ যে স্বস্তি পেয়েছিল তা বললেও ভুল হবে না। কেননা শীর্ষ ছয়ে থেকেই বাংলাদেশের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব খেলার কথা ছিল। তা ঝুলে গেছে এশিয়ান হকি ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে। পাকিস্তান আসর বয়কট করার পরও তাদের বাংলাদেশের বিপক্ষে প্লে-অফ ম্যাচে সুযোগ করে দিয়েছে এশিয়ান হকি ফেডারেশন। তিন ম্যাচের সিরিজে যারা জিতবে তারাই বিশ্বকাপ কাপ বাছাইপর্বে খেলবে।
গোটা দেশ যখন ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশ-ভারত ফুটবল ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনায় কাঁপছে। তখন কি হিসেব বদলে দিতে পারবে বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল? পারবে কি প্রথমবার পাকিস্তানকে হারাতে? ফুটবলে ভারতকে হারানোর প্রতীক্ষা করছেন ফুটবলপ্রেমীরা। কিন্তু হকিতে যদি জিততে পারে তা হবে আরও বড় ঘটনা। প্রথমবারের মতো হকিতে বিজয় পতাকা উড়বে। ইতিহাস লেখা হয়ে যাবে অন্যভাবে। প্রশ্ন হচ্ছে তা কি সম্ভব? হকিতে পাকিস্তানকে হারানোটা সত্যিই কঠিন। তারপরও অতীত ও বর্তমানের পার্থক্য অনেক। বিশ্বকাপ, অলিম্পিক গেমস, এশিয়া কাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বা এশিয়ান গেমসে যতই শিরোপা জেতার কৃতিত্ব থাকুক না কেন। হকিতে পাকিস্তানের আগের সেই দাপুটে চেহারা নেই। এতটাই সংকটাপন্ন যে, দুই বিশ্বকাপ বা অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি তারা।
শুধু মানের অবনতি নয়। হকিতে পাকিস্তানে দ্বন্দ্ব অনেক দিন ধরে প্রকট। এতটা খারাপ অবস্থা যে, একসঙ্গে খেললেও খেলোয়াড়রা একে অপরের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলেন না। ঢাকায় পাকিস্তান এসে অনুশীলনে নেমে পড়েছে। আসেননি হেড কোচ তাহির জামান। তার কাজে ফেডারেশনের কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করেন বলেই অভিমানে সরে গেছেন। সব মিলিয়ে হকিতে এখন পাকিস্তানের নড়বড়ে অবস্থা। এমন দলকে কি হারাতে পারবেন না আশরাফুলরা? সিরিজ জিতে যদি হকির বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ খেলতে পারে তা হবে বড় প্রাপ্তি। অনূর্ধ্ব-২১ দল হকির বিশ্বকাপে খেলবে। পাকিস্তানকে হারিয়ে বাছাইপর্ব যোগ্যতা অর্জন করলেও ইতিহাস। তা না হোক, যদি সিরিজে এক ম্যাচও জেতে তারপরও পরাজয়ের বৃত্ত থেকে বের হবে। হোয়াইটওয়াশ হলে সেই লজ্জাতেই বন্দি থাকবে বাংলাদেশ। ১৩, ১৪ ও ১৬ নভেম্বর তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।