মানব ইতিহাসের অন্যতম বড় বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা শনাক্ত করেছেন এমন কিছু গ্যাস, যা পৃথিবীতে সাধারণত জীবন্ত প্রাণী, বিশেষ করে শৈবাল উৎপাদন করে।
গবেষক দলটি K2-18b নামের এক দূরবর্তী গ্রহের বায়ুমণ্ডলে ডাইমিথাইল সালফাইড ও ডাইমিথাইল ডিসালফাইড নামে দুটি গ্যাস খুঁজে পেয়েছেন। পৃথিবী থেকে প্রায় ১২৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এই গ্রহটির আকার পৃথিবীর চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বড়। এটি তার নক্ষত্রের এমন এক কক্ষপথে ঘুরছে, যাকে বিজ্ঞানীরা ‘হ্যাবিটেবল জোন’ (যেখানে তরল পানি থাকার সম্ভাবনা থাকে) বলে থাকেন।
গবেষণা দলের নেতৃত্বে থাকা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকু মাধুসূদন বলেন, এটি এখন পর্যন্ত ভিনগ্রহে প্রাণের সম্ভাবনার সবচেয়ে শক্ত প্রমাণ। তিনি জানান, এক থেকে দুই বছরের মধ্যেই এ বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তার ভাষায়, শনাক্ত হওয়া গ্যাসগুলোর ঘনত্ব পৃথিবীর তুলনায় কয়েক হাজার গুণ বেশি, যা কোনো ভিনগ্রহী সমুদ্র এবং অণুজীবের উপস্থিতির সম্ভাবনা জাগায়।
তবে সব বিজ্ঞানী এ বিষয়ে একমত নন। অন্য কিছু গবেষক ওয়েব টেলিস্কোপের তথ্য পুনঃবিশ্লেষণ করে বলেছেন, গ্যাস শনাক্তকরণের প্রমাণ এখনো পরিসংখ্যানগতভাবে নিশ্চিত নয়। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. ডেভিড ক্লেমেন্টস বলেন, এটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তবে চূড়ান্ত প্রমাণ নয়।
বিজ্ঞানীরা জানান, ভিনগ্রহে প্রাণের প্রমাণ ঘোষণা করতে হলে প্রায় শতভাগ নিশ্চিত হতে হবে, যাকে বলা হয় ‘ফাইভ সিগমা থ্রেশহোল্ড’ (বিশ্বাসযোগ্যতার মাত্রা ৯৯.৯৯৯৯৯%)। তাই আপাতত এই ফলাফলকে চূড়ান্ত আবিষ্কার বলা যাচ্ছে না।
আগামী কয়েক মাসে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের আরও পর্যবেক্ষণ এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে পারে। যদি সত্যিই প্রাণের প্রমাণ নিশ্চিত হয়, তবে এটি মানব ইতিহাসের সবচেয়ে যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক সাফল্যের একটি হবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল