চুরি হয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের নাটবোলটু। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ পর্যন্ত স্টিল গার্ডারের ১৪০টি নাটবোলটু ও ৫৩টি ওয়াশার চুরি হয়েছে বলে জানা গেছে। চুরি বন্ধ না হলে আগামীতে ফ্লাইওভার ঝুঁকিতে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। গত ১৩ আগস্ট নাট চুরির ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা স্থানীয়ভাবে পরিচিত মাদকাসক্ত। এসব নাটবোলটু ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে মাদক সেবন করে। এরপরই ধারাবাহিক চুরির বিষয়টি সামনে আসে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চসিক ওই চুরির ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখতে পান, ফ্লাইওভারের জিইসি থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কমুখী র্যাম্পের কিছু কিছু অংশে স্টিল গার্ডারের নাটবোলটু নেই। এ সময় জিইসি থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কমুখী স্টিল গার্ডারে ১৪০টি নাটবোলটু এবং ৫৩টি ওয়াশার পাওয়া যায়নি। মাদকাসক্ত দ্বারা এসব নাটবোলটু চুরির ঘটনা ঘটছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া উড়ালসড়কের উচ্চতার কারণে ও যন্ত্রপাতির অভাবে ফ্লাইওভারের কাঠামো নিয়মিত পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না বলে প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়। একই সঙ্গে ফ্লাইওভারে পরীক্ষা ও রক্ষণাবেক্ষণে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি (যেমন ক্রেন ও ম্যান-লিফট) ক্রয়সহ একগুচ্ছ সুপারিশ করেছে কমিটি।
জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ৬৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়। ২০১৯ সালে সিডিএ এটি চসিককে হস্তান্তর করে। এটিতে মোট তিনটি র্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ) ও একটি লুপ (উড়ালসড়ক থেকে বাঁক নিয়ে অন্য রাস্তায় সংযুক্ত করা) আছে। ফ্লাইওভারটি শুলকবহর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত। এটির একটি র্যাম্প ও লুপ নির্মিত হয় বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে জিইসি পর্যন্ত। এর মধ্যে জিইসি থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কমুখী পর্যন্ত র্যাম্প থেকে গত কয়েক মাসে নাটবোলটুসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি চুরির অভিযোগ ওঠে।
তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব ও চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী রিফাতুল করিম বলেন, ফ্লাইওভার থেকে নাটবোলটু চুরি করছে মাদকসেবীরা। তবে চুরি হওয়া নাটবোলটুগুলো ইতোমধ্যে মেরামত করে দেওয়া হয়েছে। সম্ভাব্য ওঠা-নামার জায়গায় কাটা তারও দেওয়া হয়েছে। চুরি হওয়া নাটবোলটুর কারণে হয়তো এখন কোনো সমস্যা হবে না, কিন্তু আগামীর জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এটি রক্ষণাবেক্ষণে আমরা দশটি সুপারিশ দিয়েছি। সহায়তার জন্য পুলিশকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ফ্লাইওভার রক্ষায় যত সুপারিশ : চসিকের তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, চুরি রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারির ব্যবস্থা, ফ্লাইওভারগুলোর ওপর-নিচে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করে নিয়মিত নজরদারি ব্যবস্থা করা, দ্রুত সময়ের মধ্যে ফ্লাইওভারের নাটবোলটু লাগানো, কোথাও নাটবোলটু চুরি হয়েছে কি না, কোথাও সংযোগ শিথিল হয়েছে কি না- তা দক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা, ফ্লাইওভারের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারে দক্ষ কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবল গড়ে তোলা, ৪০-৭০ ফুট উঁচু ক্রেন-লিফট কেনা, ফ্লাইভারের জিইসি থেকে বায়েজিদ বোস্তামী সড়কমুখী র্যাম্পে ও বায়েজিদ বোস্তামী সড়ক থেকে ২ নম্বর গেটমুখী লুপের মধ্যবর্তী খোলা স্থান দিয়ে প্রবেশ ঠেকাতে কাঁটাতার দেওয়া, ফ্লাইওভারের নিচে সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্প নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা, নাটবোলটু চুরির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা, ফ্লাইওভারগুলোর নিচে যাতে মাদকসেবীদের আস্তানা গড়ে উঠতে না পারে, সে জন্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা।