১১এ। ইউরোপীয়রা বলেন, বোয়িং বিমানের এই আসনে যাত্রা করলে সফরের মেজাজটাই নষ্ট হয়! এই আসন নামেই ‘উইন্ডো সিট’। ১১এ-র পাশে আদতে কোনও জানালা নেই। বিমানের দেয়াল। আর সে কারণেই যাত্রীরা মোটেও পছন্দ করেন না আসনটি। এয়ার ইন্ডিয়ার অহমেদাবাদ-লন্ডনগামী বোয়িং বিমানের সেই আসনে বসেই প্রাণরক্ষা হয়েছে বিশ্বাসকুমার রমেশের।
বিমান সওয়ার ২৪২ জনের মধ্যে একমাত্র তিনিই প্রাণে বেঁচেছেন। তার পরেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি বোয়িং বিমানের সবচেয়ে অপছন্দের এই আসনই সবচেয়ে নিরাপদ? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই প্রশ্ন করেছেন ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা ৩৮ মিনিটে অহমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল বিমানবন্দর থেকে উড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনের গ্যাটউইকগামী বিমান। ওড়ার পাঁচ মিনিটের মাথায় অহমদাবাদের মেঘানিনগরে ভেঙে পড়েছিল সেটি। বিমানে সওয়ার ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। বেঁচে রয়েছেন ১১এ আসনের রমেশ। তাঁর এই প্রাণরক্ষা ‘মিরাকল’ বলেই মনে করছে গোটা বিশ্ব। বোয়িং বিমানের সবচেয়ে বিরক্তিকর আসনকেই এখন সবচেয়ে ‘পয়মন্ত’ বলছেন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
বোয়িং ৭৩৭-৯০০ এবং ৯০০ইআরে ১১এ আসনটি জানালার ধারে হলেও তার পাশে কোনও জানলা থাকে না। তাই একে বলে ‘উইন্ডোলেস উইন্ডো সিট’। এয়ার কন্ডিশনিং যন্ত্রের ডাক্ট, পরিকাঠামো থাকার কারণে ১১এ আসনের পাশে জানলা থাকে না। ৯এ, ১০এ, ১২এ আসনেও এই সমস্যা থাকে। বোয়িং ৭৩৭-এর সব বিমানেই একই সমস্যা। আর তা নিয়ে যাত্রীরা প্রায়ই সমাজমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই না জেনে এই আসন বুক করে ফেলেন। ভাবেন জানালার পাশের আসনে বসে সফর করবেন। যদিও বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। অনেকে আবার ঠাট্টাও করেন।
বোয়িং বিমানে এই ১১এ আসনের আরও কিছু বিপত্তি রয়েছে। যেমন এই আসনের পাশে অনেক সময় থাকে খাবার, চা রাখার ট্রলি। সারা রাত সেখানে টুকটাক কাজ থাকে বিমানকর্মীদের। ফলে অনেক সময়েই ঘুমের বারোটা বাজে। বিজনেস ক্লাস শেষ হয়ে এই ১১এ থেকেই বিমানের ইকোনমি ক্লাস শুরু হয়। সে কারণে এই আসনের সামনে জায়গাটা একটু বেশি থাকে। পা ছড়িয়ে বসা যায়। সে কারণে অনেক সময়েই শিশু নিয়ে যে সব যাত্রী যাতায়াত করেন, তাদের এই আসন দেওয়া হয়। মোট কথা, এই আসনের চেপে যাত্রা খুব একটা ‘সুখকর’ হয় না।
অহমেদাবাদ দুর্ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠছে, তবে কি বোয়িং বিমানের ১১এ আসনের জন্য এ বার থেকে বেশি ভাড়া নেবে বিমান সংস্থাগুলি? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন এই প্রশ্নই তুলেছেন ব্যবহারকারীদের বড় অংশ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সুনাক লিখেছেন, অদ্ভুত ভাবে, অহমেদাবাদের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানে যে এক জন যাত্রী প্রাণে বেঁচেছেন, তিনি ১১এ আসনে বসেছিলেন। বোয়িং বিমানের একমাত্র উইন্ডো আসন, যাতে কি না জানলা নেই। বিমানে আপৎকালীন অবস্থায় এটাই কি সবচেয়ে নিরাপদ আসন? এই পোস্টে আয়ারল্যান্ডের বিমান সংস্থা ‘রায়ানএয়ার’কে ট্যাগ করেছেন সুনাক। ইউরোপ, মরক্কোয় সস্তায় উড়ান পরিষেবা দেয় আয়ারল্যান্ডের বিমান সংস্থা ‘রায়ানএয়ার’। তাদের বোয়িং বিমানগুলিতে উঠে প্রায়ই এই ১১এ আসন নিয়ে অভিযোগ জানান বহু যাত্রী। ছবি পোস্ট করেন সামাজিক মাধ্যমে। এ জন্য বাজারে বেশ বদনামও হয়েছিল সংস্থার। এবার সেই সংস্থার বিমানের ১১-এ আসনের ছবিই ঘুরছে সামাজিক মাধ্যমে। নেটব্যবহারকারীদের কেউ কেউ ঠাট্টা করে বলছেন, এবার এই আসনের দাম বৃদ্ধি করবে বিমান সংস্থা। রমেশের বাড়ির লোকজন হয়তো বাড়ি বসে বলছেন, ‘ভাগ্যিস!’
সূত্র: আনন্দবাজার
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল