কথা ছিল শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে দেশের শিল্প এলাকাগুলোতে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং তা মনিটর করা হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ৩১ মে আশুলিয়া ও গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্প এলাকার জ্বালানি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ শেষে এ আশ্বাস দেন। কিন্তু শিল্প এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কয়েকটি এলাকায় গ্যাস সরবরাহ কিছুটা বাড়লেও অনেক শিল্প এলাকায় পরিস্থিতি আগের মতোই আছে। অর্থাৎ গ্যাস সরবরাহ বাড়েনি। শিল্পমালিকরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, গাজীপুর, কালিয়াকৈর, সাভার, আশুলিয়া ও মাওনা শিল্পাঞ্চল এলাকার কারখানাগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, নবীনগর, মানিকগঞ্জের কারখানাগুলোতে গ্যাসসংকট আগের মতোই আছে।
শিল্পমালিকরা আরও জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার আশ্বাসের পর গ্যাস পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানায় গ্যাসের অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা গ্যাস সরবরাহ জানুয়ারি-এপ্রিল ’২৫ বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু গ্যাস বিতরণকারী অন্য কোম্পানিগুলোতে এ সরবরাহের পরিমাণ বাড়ানো হলেও সবচেয়ে বড় বিতরণকারী সংস্থা তিতাসে চাহিদার তুলনায় কম পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হয়। ফলে শিল্পাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বৃদ্ধি পায়নি। বাংলাদেশ গার্মেন্টস এক্সেসরিস অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএপিএমইএ) সভাপতি মো. শাহরিয়ার বলেন, আমাদের ৬০ শতাংশ কারখানায় এখনো গ্যাসের সরবরাহ নেই। বিশেষ করে ধামরাই রোডে নবীনগর থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত যাদের কারখানা আছে তাদের কারখানায় মিটারের চাপ শূন্য। আর সাভার ও আশুলিয়ার শিল্পকারখানায় গত শনিবার রাতে ৭ থেকে ৮ শতাংশ গ্যাসের চাপ বেড়েছে। ইপিজেড এলাকায় অবস্থিত আমার লেভেল মেকারস লিমিটেড কারখানায় গ্যাসের চাপ সামান্য বেড়েছে। শনিবার সকালে যেখানে কারখানায় গ্যাসের চাপ ছিল ৩ পিএসআই সন্ধ্যায় তা ৪ পিএসআই হয় এবং রবিবার সন্ধ্যায়ও তা ৪ পিএসআই ছিল। যেহেতু রাতারাতি এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না এজন্য আমরা আরও দুই-এক দিন অবস্থা পর্যবেক্ষণ করব।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সালেউদজামান খান বলেন, শিল্পমালিকদের গ্যাসসংকটের বিষয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি উপদেষ্টা সরেজমিন শিল্পকারখানা পরিদর্শন করেন। উপদেষ্টার পরিদর্শনের পর গাজীপুরের শিল্পকারখানায় কিছুটা গ্যাসের চাপ বেড়েছে। কিন্তু রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার শিল্প এলাকার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। দ্রুত অবস্থার উন্নতি না হলে আমরা জ্বালানি উপদেষ্টাকে এসব এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শনে যাওয়ার জন্য লিখিত অনুরোধ করব। জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গে এ পরিদর্শনে গাজীপুরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকায় তাদের উপদেষ্টা তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেওয়ায় সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে বলে ধারণা করছি। তিনি আরও বলেন, আমার রূপগঞ্জে অবস্থিত এনজেড টেক্সটাইলে আজকে গ্যাসের চাপ ৩ পিসিআই। শনিবার ও শুক্রবার তা ছিল ১ থেকে ১.২ পিএসআই। গাজীপুর ও কালিয়াকৈরে ৫ থেকে ১০ পিএসআই পর্যন্ত চাপ বেড়েছে। এতে উৎপাদনও কিছুটা বেড়েছে।
ভাওয়াল মির্জাপুরে অবস্থিত নোমান গ্রুপের তালহা ফেব্রিক্স লিমিটেড কারখানায় গ্যাসের চাপ বেড়েছে। গত শনিবার কারখানাটিতে গ্যাসের চাপ ছিল ৯ পিএসআই। পরেরদিন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ থেকে ৩০ পিএসআই। এতে কারখানার উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি ধারাবাহিকভাবে থাকে কি না সেটিই এখন দেখার বিষয় বলে জানিয়েছেন নোমান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জাবের।