সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে তৃতীয় ধাপে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে নিয়োগ দিতে ৬ হাজার ৫৩১ জনের প্রকাশিত ফল বাতিলসংক্রান্ত রায় স্থগিত করে এর বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি) আবেদন মঞ্জুর করে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ গতকাল এ আদেশ দেন। এর ফলে ওই সাড়ে ৬ হাজার আবেদনকারীর যোগদানে বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবী। আদালতে লিভ টু আপিলকারীর পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ। রিট আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী, এম বেলায়েত হোসেন ও কামরুজ্জামান ভূঁইয়া শুনানিতে অংশ নেন।
আদেশের পর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, হাই কোর্টের রায় স্থগিত করা হয়েছে। লিভ মঞ্জুর করেছেন আপিল বিভাগ। ৬ হাজার ৫৩১ জনের যোগদানে আর কোনো বাধা রইল না। আদেশের পর প্রাথমিকে নিয়োগপ্রত্যাশীরা শাহবাগে আনন্দ মিছিল করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট ওই রায় দেন। রায়ে ৬ হাজার ৫৩১ জনকে নিয়োগ দিতে প্রকাশিত চূড়ান্ত ফলাফল এবং নির্বাচিতদের অনুকূলে নিয়োগপত্র ইস্যুর সিদ্ধান্ত আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গত বছরের ২৩ জুলাইয়ের পরিপত্র অনুসরণ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নতুন করে ফল প্রকাশ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। হাই কোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে নিয়মিত লিভ টু আপিল আবেদন করা হয়। গতকাল ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।
এর আগে ২০২৩ সালের ১৪ জুন ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এরপর ৬ হাজার ৫৩১ প্রার্থীকে নির্বাচন করে গত বছরের ৩১ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত ১১ নভেম্বরের এ-সংক্রান্ত আদেশ অনুসারে নির্বাচিতদের অনুকূলে ২০ নভেম্বর নিয়োগপত্র ইস্যু করার কথা ছিল। তবে ওই নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা অনুসরণের অভিযোগ তুলে ফলাফল প্রকাশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নিয়োগবঞ্চিত কয়েকজন প্রার্থী নভেম্বরে রিট করেন।
প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৯ নভেম্বর হাই কোর্ট রুল দেন এবং ৩১ অক্টোবর ও ১১ নভেম্বরের সিদ্ধান্তের কার্যক্রম স্থগিত করেন। রুলে ৩১ অক্টোবরের ফলাফল প্রকাশের বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ বিষয়ে ১১ নভেম্বরের নির্দেশনাসংবলিত স্মারক কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালকসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
হাই কোর্টের আদেশ (৩১ অক্টোবর ও ১১ নভেম্বরের সিদ্ধান্ত) স্থগিত চেয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ লিভ টু আপিল করে। ৯ ডিসেম্বর এ আবেদন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ লিভ টু আপিল নিষ্পত্তি করে দিয়ে হাই কোর্টে এ-সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্ট রায় দেন।
