পরীক্ষা পৃথিবীর এক অমোঘ রীতি। প্রতিভা যাচাইয়ে পরীক্ষার তাৎপর্য অনস্বীকার্য। এটি যোগ্য ব্যক্তি শনাক্তকরণের মাধ্যম। কারো সুপ্ত দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য কখনো পরীক্ষা নেওয়া হয়ে থাকে। নবীযুগেও এমন পরীক্ষা নেওয়া হতো। স্বয়ং নবীজি (সা.) সাহাবিদের পরীক্ষা নিয়েছেন।
মদিনায় কোনো এক মজমায় একদিন উপবিষ্ট নবীজি (সা.)। আশপাশে নেই কোনো কোলাহল। সামনে বসা প্রিয় সাহাবিরা। নবী করিম (সা.) সাহাবিদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সঠিক পথের চালিকাশক্তি কী হতে পারে তা বলে দিচ্ছেন। সাহাবিরা নবীজির অমূল্য বাণী শুনছেন নীরবে। নীরবতার ধরন ছিল এমন, যেন তাদের মাথায় বসে আছে পাখিরা। এমন একটি স্নিগ্ধ ও শীতল পরিবেশে রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের পরীক্ষা নিলেন।
নবীজি (সা.) বলেন, গাছের মধ্যে এমন একটি গাছ আছে, যার পাতা ঝরে পড়ে না এবং তা হলো মুমিনের দৃষ্টান্ত। তোমরা আমাকে বলতে পারো সেটা কোন গাছ? অতঃপর লোকজনের খেয়াল চলে গেল জঙ্গলের গাছপালার প্রতি। বিভিন্নজন বিভিন্ন উত্তর দিতে লাগল। কিন্তু উত্তর তাঁর মনঃপূত হলো না।
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ছিলেন প্রখর মেধার অধিকারী, তবে সাহাবিদের মধ্যে কনিষ্ঠ। তাঁর হৃদয়ে উদিত হলো সঠিক উত্তর। কিন্তু একটু কুণ্ঠিত হলেন। তাঁর খেয়াল ছিল এমন, ‘প্রবীণ ও আকাবিরে সাহাবিরা যখন উত্তর দিচ্ছেন না; আমি তাঁদের কনিষ্ঠ, কিভাবে উত্তর দেব?’
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর ভাষায়, ‘আমার মনে হলো তা খেজুরগাছ। কিন্তু আমি সংকোচবোধ করলাম। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আপনিই আমাদের বলে দিন, সঠিক উত্তর কী? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তা হলো খেজুরগাছ। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, তারপর আমি আমার পিতাকে আমার মনে যা এসেছিল তা বললাম। তিনি বললেন, তুমি যদি তখন বলে দিতে যে তা খেজুরগাছ, তবে অমুক অমুক জিনিস লাভ করার চেয়েও আমার কাছে অধিক প্রিয় হতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৪৪৮)।
হাদিসে উপমা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে দেওয়া হয়েছে, এ প্রশ্নের উত্তরে মুহাদ্দিসরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কোনো কোনো মুহাদ্দিস বলেন, খেজুরগাছের ডগা কেটে ফেললে তা আর বাঁচে না, তেমনি মানুষের মস্তক কেটে ফেললে মানুষ বাঁচে না।
কিছু মুহাদ্দিস এভাবে ব্যাখ্যা করেন, খেজুরগাছ অধিক উপকার ও কল্যাণ গ্রহণের মাধ্যম। যেমন খেজুরগাছের পাতা ঝড়ে না বিধায় সে গাছের ছায়া গ্রহণ করা যায় সর্বক্ষণ। তার ফল তথা খেজুর সুস্বাদু হয়।
এই বৃক্ষের কাঠ ও পাতা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি। ঠিক তেমনি একজন মুমিনের সব কর্মই হয় কল্যাণজনক। কেননা মুমিন থেকে প্রকাশ পায় আল্লাহর আনুগত্য, কল্যাণ কাজে দান-সদকা ও সহযোগিতা এবং অপর মুমিনের সঙ্গে শিষ্টাচার, উত্তম ব্যবহার ইত্যাদি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ