সংস্কার করে জাতিকে বদলাতে চায় সবাই। একটি জাতি পরিবর্তন ও উন্নতি হলেই হৃদয়ে প্রশান্তির বাতাস বইবে। সুখশান্তিতে পরিবারপরিজন আত্মীয়স্বজনসহ মিলেমিশে নিরাপদভাবে বসবাস করা যাবে। তেমনি আবিদ সাহেবেরও ইচ্ছা সংস্কার করে বদলাতে হবে জাতিকে। রাস্তাঘাটে ফুটপাতের ওপর দোকান, ট্রাফিক আইন অমান্য, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা, নকল ওষুধ, খাদ্যে ভেজাল, কম দামি দেশি কাপড় বেশি দামে বিদেশি বলে প্রতারণা, দুর্নীতিসহ সব ধরনের অন্যায় অপরাধ প্রতিরোধ করে জাতিকে সংস্কার জরুরি। আবার সুযোগ পেলে অন্যকে জিম্মি করে অর্থ আয়ের ব্যবস্থা করছে। ঝগড়াবিবাদ, গুম-খুন কেন মানুষ এগুলো করছে, সুন্দর দেশকে অসুন্দর করছে। কীভাবে সংস্কার করে বদলানো যাবে পুরো জাতিকে। ভাবতে ভাবতে আবিদ সাহেব পানি খেয়ে বোতলটি রাস্তার পাশে ড্রেনে ফেলেছে, অতঃপর মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হয়েছে, অন্যকে ঠকিয়ে অতিরিক্ত লাভে পণ্য বিক্রি করেছে, সেই আনন্দে পাবলিক স্পেসে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছে। বাড়িতে গিয়ে খুশিতে অতিরিক্ত সাউন্ড দিয়ে পার্টি, আর সকাল-সন্ধ্যায় সংস্কারের বুলি জপছে। অথচ নিজের মধ্যেই নেই সংস্কার। নিজেই অপরাধমূলক কাজ করে সংস্কারের আওয়াজ তুলছে। নিজেই জাতিকে সংস্কার করবে বলে নিজেই জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘দৃষ্টিতে এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ব্যাপার যে তোমরা বলবে এমন কথা যা তোমরা কর না (সুরা আস সফ, আয়াত-০৩)।’
জাতিকে সংস্কার করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে বহু দূর। তাই জাতির সংস্কারের আগেই সর্বপ্রথম নিজের অসুস্থ মনমানসিকতার সংস্কার খুবই প্রয়োজন। অন্যকে বদলাতে হলে নিজেকে বদলানো বেশি জরুরি। নিজের চোখ দিয়ে সুন্দর সমাজ দেখতে চাইলে নিজের হৃদয়ে থাকা অন্ধকার দূর করতে আলো ছড়াতে হবে। অন্যের উপকার ও ভালো ব্যবহারের আশা করলে নিজেকেই অন্যের জন্য বিলিয়ে দিতে হবে। সব ধরনের অন্যায়-অপরাধ বন্ধ করতে চাইলে নিজেকেই সব ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, অপরাধ অপরাধই। ছোট কিংবা বড় হোক। নিজের হৃদয়ে থাকা আত্মা পরিশুদ্ধ করতে পারলেই পরিবর্তন করা সম্ভব একটি জাতি। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের অবয়ব ও সম্পদ দেখেন না, কিন্তু তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’ সহিহ মুসলিম শরিফ।
অন্তরে অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ, রিয়া লালন করে জাতিকে সংস্কারের আশা করা বৃথা। হৃদয়ের কঠোরতা দূরীভূত করে ভালোবাসা বিসর্জন দিয়ে মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের পক্ষে সর্বদা লড়াই করতে হবে। অন্তর থেকে লোভলালসা চিরতরে দূর করতে হবে। নিজে অন্যায় করব না, অপরকে করতেও দেব না, এ মনমানসিকতা তৈরি করে জাতিকে উন্নতি করতে হবে। আত্মসংস্কার করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে পরিবার-পরিজনসহ অধীনস্থদের সংস্কার করতে পারলেই বদলাবে একটি জাতি। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর। যার জাহান্নামের (জ্বালানি) হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-স্বভাবের ফেরেশতারা। যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা অমান্য করেন না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করেন (সুরা তাহরিম : আয়াত-৬)।’
লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক
বিডি প্রতিদিন/এমআই