সেন্ট্রাল লন্ডনে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে এক লাখেরও বেশি মানুষ। ডানপন্থি নেতা টমি রবিনসনের আহ্বানে শনিবার স্থানীয় সময় বিকেল তিনটার পর সেন্ট্রাল লন্ডনের হোয়াইটহলে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। একই সময়ে সেখানে বর্ণবাদবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনও পাল্টা কর্মসূচি পালন করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়, ‘ইউনাইট দ্য কিংডম’ শীর্ষক এ কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন আয়োজকদের বিভিন্ন নেতা। ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ইলন মাস্ক যুক্তরাষ্ট্র থেকে অংশ নেন।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ‘সরকার পরিবর্তনের ডাক’ দেন ইলন মাস্ক।
তিনি বলেন, ‘আপনারা পারবেন না; আমাদের চার বছর অপেক্ষা করা বা পরবর্তী নির্বাচন যতদিনেই (অনুষ্ঠিত) হোক— এটি বেশ দীর্ঘ সময়।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিছু না কিছু করতে হবে। পার্লামেন্ট ভেঙে নতুন ভোট আয়োজন করতে হবে।’
শনিবারের এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা ইংল্যান্ডের ও ব্রিটেনের পতাকা হাতে যোগ দেন।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে রবিনসন বলেছেন, “ইতোমধ্যেই লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে লাখ লাখ মানুষ জড়ো হয়েছে, আমরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য এক হয়েছি।”
লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ (মেট) জানায়, বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ অন্তত নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, সমাবেশে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করতে দেখা গেছে এবং কিছু পুলিশ সদস্যের দিকে বিভিন্ন বস্তু ছোড়া হয়েছে।
পুলিশ বলেছে, রবিনসনের পক্ষের বিক্ষোভকারীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাঁদের দিকে কাচের বোতল, লোহার পাইপ এবং বিয়ারের ক্যান নিক্ষেপ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এদিন একই সময়ে কাছেই ‘স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম’ শীর্ষক পাল্টা প্রতিবাদও অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ অংশ নেন।
ব্রিটিশ পুলিশ জানায়, দিনভর বিক্ষোভ সামলাতে লন্ডনে এক হাজার ৬০০ এর বেশি পুলিশ সদস্যকে মোতায়েন করা হয়, যাদের মধ্যে ৫০০ এসেছেন অন্যান্য অঞ্চল থেকে। এর পাশাপাশি লন্ডনে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ফুটবল ম্যাচ ও কনসার্ট থাকায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে চাপে পড়ে।
স্থানীয় সময় দুপুর নাগাদ টেমস নদীর দক্ষিণ পাশের রাস্তাগুলোতে লাখো বিক্ষোভকারী জড়ো হয়। পরে তারা যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট ভবন যেখানে সেই ওয়েস্টমিনস্টারের দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আগাতে শুরু করে। এ সময় তাদের হাতে যুক্তরাজ্যের ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা, ইংল্যান্ডের লাল-সাদা সেন্ট জর্জ ক্রস, এমনকি মার্কিন ও ইসরায়েলি পতাকা দেখা যায়। অনেকে পরে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণার ‘মেক আমেরিকা গ্রেইট এগেইন’ টুপি।
মিছিলে তারা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। তাদের বহন করা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘ওদের ফেরত পাঠাও’। মিছিলে অনেক পরিবারের শিশুদেরও সঙ্গে এনেছিলেন।
ব্রিটেনে এখন অর্থনৈতিক সংকটের চেয়েও বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে অভিবাসন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি অভিবাসী ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে দেশটিতে পৌঁছেছে। এই সংখ্যা রেকর্ড পরিমাণ।
লাল-সাদা ইংল্যান্ডের পতাকা এখন লন্ডনের রাস্তায়, দেয়ালে, এমনকি সড়কের ওপর আঁকা হচ্ছে। সমর্থকদের ভাষায়, এটি জাতীয় গৌরবের বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু বর্ণবাদবিরোধী কর্মীদের চোখে, এটি বিদেশিদের প্রতি শত্রুতার বার্তা।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম