মারাত্মক আর্থিক সংকট কাটিয়ে অর্থনীতি ‘উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়ালেও’ নগদ অর্থ সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কার প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি তাদের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায়।
বার্তা সংস্থাটি জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০২৪ সালে ৫.০ শতাংশে পৌঁছায়, যা বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস ৪.৪ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। ২০২২ সালের সংকটের পর এটাই প্রথম ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি।
বিশ্বব্যাংক তাদের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলেছে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হলেও বহু শ্রীলঙ্কান এখনো কষ্টে দিন পার করছেন। ২০২৪ সালে দারিদ্র্যের হার উদ্বেগজনকভাবে ২৪.৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, শ্রমবাজার এখনও চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে, যার ফলে অনেকেই বিদেশে সুযোগের খোঁজে দেশ ছাড়ছেন। পরিবারগুলোর আয়, কর্মসংস্থান ও সামগ্রিক জীবনমান সংকটপূর্ব পর্যায়ের তুলনায় অনেক নিচে রয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের তুলনায় শ্রমজীবীদের মজুরি এখনও কম। প্রতিদিন ৩.৬৫ ডলারের কম আয় করা মানুষদের দারিদ্র্যসীমা ধরে হিসাব করলে, এ হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৩.৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে, যার জন্য তারা মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে সৃষ্ট অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছে।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে শ্রীলঙ্কা ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণ খেলাপি হয়, যখন তাদের খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ আমদানির মতো খরচ চালানোর মতো বৈদেশিক মুদ্রা শেষ হয়ে গিয়েছিল।
বিভিন্ন জরুরি পণ্যের তীব্র ঘাটতির প্রতিবাদে মাসব্যাপী বিক্ষোভে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগে বাধ্য হন।
তার উত্তরসূরি রনিল বিক্রমাসিংহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে চার বছরের জন্য ২.৯ বিলিয়ন ডলারের একটি উদ্ধার ঋণ নিশ্চিত করেন এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে ভর্তুকি কমানো ও কর বৃদ্ধি করেন।
চলতি মাসের শুরুতে আইএমএফ সতর্ক করে বলেছে, যদি যুক্তরাষ্ট্র পুনরায় কঠোর শুল্ক আরোপ করে, তবে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার হুমকির মুখে পড়তে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় একক রপ্তানি বাজার—১২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানির প্রায় এক চতুর্থাংশই মার্কিন বাজারমুখী। এই বাণিজ্য ঘাটতি শ্রীলঙ্কার অনুকূলে রয়েছে।
ওয়াশিংটন সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার ওপর ৪৪ শতাংশ ‘পারস্পরিক শুল্ক’ আরোপ করে, যা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।
শ্রীলঙ্কা এর পাল্টা ব্যবস্থা না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার আবেদন জানিয়েছে।
গত সেপ্টেম্বরে ক্ষমতায় আসা প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমারা ডিসানায়েকের নেতৃত্বাধীন বামপন্থী সরকার আগের সরকারের বেশিরভাগ কৃচ্ছ্রতা নীতি বজায় রেখেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি সমন্বিত কৌশল নির্ধারণে সব পক্ষকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/নাজিম