দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত রয়েছেন ৩১ লাখ শ্রমিক। তিন বছরের ব্যবধানে শ্রমিক বেড়েছে ৩ লাখ। সারা দেশে ৩ হাজার ৫৫৫টি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় প্রায় ৩০ লাখ ৪০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। পোশাকশিল্পে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হলেও এ সংখ্যাটি সমর্থন করার জন্য বিস্তৃত কোনো তথ্য নেই।
পোশাক শ্রমিকের প্রকৃত সংখ্যা বের করতে ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) একটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। এমআইবির তথ্য সংগ্রহকারীরা বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের কারখানাগুলোতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে দুই বছরের রপ্তানি তথ্য যাচাই করে শ্রমিকের সংখ্যা তুলে ধরেছে।
৩ হাজার ৫৫৫টি কারখানার মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৭২০টি কারখানা বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমএই) এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সদস্য। বাকি ৮৩৬টি কারখানা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই খাতের কোনো বাণিজ্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। ২০২১ সালে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছিল ২৮ লাখ।
এমআইবির মতে, পুরুষ ও নারী পোশাক শ্রমিকের অনুপাত এখন ৪২.৩:৫৭.৭। যদিও বছরের পর বছর ধরে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে যে ৮০ শতাংশ পোশাক শ্রমিক নারী। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। বাণিজ্য সংগঠন দুটি নিয়মিত তথ্য হালনাগাদ না করেই তাদের নিজ নিজ কারখানার শ্রমিকদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। বছরের পর বছর ধরে অটোমেশন, মজুরি বৃদ্ধি যা এ খাতে পুরুষ কর্মীদের আকর্ষণ করে, শিশু জন্ম ও যত্ন, পরিবারের দায়িত্বসহ আরও অনেক কারণে পোশাক খাতে নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
এ ছাড়াও বিজিএমইএ এবং বিকেএমএইএর সদস্য নয় এমন ৫৮১টি পোশাক কারখানা তাদের উৎপাদন ক্ষমতার ২০ থেকে ৭৯ শতাংশ পর্যন্ত রপ্তানি করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তারাও ৩৩ হাজার ৯৩৪ জনের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।
এমআইবির সিনিয়র সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট কোঅর্ডিনেটর জাবির আল শেরাজী বলেন, ২০১৭ সালে যখন জরিপ শুরু হয়েছিল প্রাথমিকভাবে ১১ হাজার ৫০০টি কারখানার নাম ছিল বা বাইরে থেকে কারখানা হিসেবে ধরে নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে তারা সব জায়গা পরিদর্শন করেছেন এবং তথ্য যাচাই করেছেন। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত তারা সর্বশেষ তথ্য হালনাগাদ সম্পন্ন করেছেন এবং এমআইবির তথ্যভান্ডারের তালিকাভুক্ত কারখানাগুলো পরিদর্শন করেছেন। একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য যাচাই এবং যাচাই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এমআইবির তথ্যভান্ডারে ৩ হাজার ৫৫৫টি কারখানা রয়েছে। প্রায় ১ হাজার ৬৫৯টি নিট পোশাক, ১ হাজার ০৯৮টি ওভেন পোশাক এবং ৭০৭টি সোয়েটার এবং ৪২০টি নিট এবং ওভেন উভয় ধরনের পোশাক তৈরি করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সাল থেকে ২৪ সালের মধ্যে এমআইবি দেশজুড়ে ৬৬৭টি তৈরি পোশাক কারখানা যুক্ত করেছে এবং ৮৯৭টি কারখানাকে অকার্যকর বলে মনে হওয়ায় তালিকা থেকে অপসারণ করেছে। নীতিনির্ধারক, শ্রম অধিকার আদায়ে নিয়োজিত সংস্থা এবং পোশাকশিল্পের মালিকদের জন্য এ তথ্যগুলো নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এমআইবি তথ্যভান্ডারে পোশাক কারখানার অবস্থান, যোগাযোগের তথ্য, পণ্য, সদস্যপদ, সামাজিক ও পরিবেশ সনদ, উৎপাদন ক্ষমতা, প্রধান ব্র্যান্ড, রপ্তানি গন্তব্য, প্রতিষ্ঠাকাল, নিকটস্থ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, পুলিশ স্টেশন এবং হাসপাতালের মতো ১২টি তথ্য পাবেন অংশীজনরা। এ ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানির কার্যক্রম মূল্যায়ন করার মানদণ্ড পরিবেশ, সামাজিক এবং শাসনসম্পর্কিত তথ্য যুক্ত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান পোশাক শ্রমিকদের এ সংখ্যার সঙ্গে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তারা কারখানাগুলো পরিদর্শন করে এবং অনুসরণ করে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। তবুও কিছু কারখানা যোগ নাও হতে পারে কারণ এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে এখনো এমন কারখানা রয়েছে যারা বিভিন্ন কারণে তথ্য সরবরাহ করতে ইচ্ছুক নয়। কিন্তু এ তথ্য অন্য যে কোনো তথ্যের তুলনায় বাস্তবসম্মত। জায়ান্ট গ্রুপের এ ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, স্থায়িত্বের জন্য নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য নিশ্চিত করার জন্য বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং সরকারের এটি পর্যবেক্ষণ করা উচিত।