সদ্য বিদায়ী ২০২৪ সালে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি পরিচালন মুনাফা করেছে দেশের পাঁচটি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক। মুনাফার এমন উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে আমদানি বাণিজ্য, ব্যাংক ঋণের সুদ, কমিশন ও মাশুল আদায় এবং শেয়ারবাজারের মুনাফা। সদ্য বিদায়ী বছরে এসব ব্যবসা থেকে ভালো আয় করেছে ব্যাংকগুলো। এতেই মুনাফা বেড়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে শরিয়াহভিত্তিক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। আগের বছরের তুলনায় ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে ইসলামী ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ ছিল ২২৬১ কোটি টাকা। গত বছর ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। আগের বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭২ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৩৯৩ কোটি টাকা। ২০২৪ সালে ২৩৭৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে পূবালী ব্যাংক। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের বছর মুনাফার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে সিটি ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা। মুনাফার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল শেষে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা। মুনাফা বেড়েছে ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ। আগের বছর ব্যাংকটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৪১৩ কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যাংক এশিয়া ১ হাজার ৭০০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ১ হাজার ৬৭৫ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ১ হাজার ১১০ কোটি, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ১ হাজার ৫০ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ৯৭৫ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৮৫০ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ৮৩০ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৬৪৪ কোটি ও চতুর্থ প্রজন্মের মেঘনা ব্যাংক ২০৪ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা পেয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে কেবল প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে সেটিকেই বলা হয় পরিচালন মুনাফা। তবে এটি কোনো ব্যাংকেরই প্রকৃত মুনাফা নয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) সংরক্ষণ এবং সরকারকে কর পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাকেই বলা হয় ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার কথা বলে দফায় দফায় ঋণের সুদহার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতি সুদহার (রেপো রেট) ৫ থেকে বাড়িয়ে উন্নীত করা হয় ১০ শতাংশে। ব্যাংক ঋণের সুদহারও সর্বোচ্চ ৯ থেকে বাড়তে বাড়তে এখন প্রায় ১৬ শতাংশে ঠেকেছে। যার প্রভাব পড়েছে পরিচালন মুনাফায়। সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের এ প্রেসক্রিপশন দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে বেড়েছে ‘কস্ট অব ডুইং বিজনেস’ বা ব্যবসা পরিচালনার ব্যয়।