আগামীকাল লকডাউন ঘোষণা করেছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় নাশকতা ঠেকাতে সারা দেশে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। দেশের সব বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
রাজধানীতে একের পর এক বাসে আগুন এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় স্পর্শকাতর স্থাপনা, সুপ্রিম কোর্ট ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে বাড়ানো হয়েছে পুলিশি পাহারা। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যেখানে সেখানে খোলা জ্বালানি তেল বিক্রি। নাশকতা ঠেকাতে ঢাকাকে আটটি জোনে বিভক্ত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্তত ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য মাঠে রাখার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও মাঠে থাকবেন। এর আগে সোমবার রাজধানীর একাধিক স্থানে বাসে আগুন দেওয়া ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীজুড়ে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের টহল ও নজরদারি।
এদিকে ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, যে কোনো ধরনের নাশকতা বা সহিংসতা ঠেকাতে রাজধানীজুড়ে কড়া নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হবে। প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হবে। পাশাপাশি জনগণকে গুজবে কান না দিতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার দিনক্ষণ ১৩ নভেম্বর ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় আসামি হিসেবে রয়েছেন শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি বর্তমানে রাজসাক্ষী হিসেবে রয়েছেন।
১৩ নভেম্বর ঘিরে শক্ত অবস্থানের জন্য পুলিশের প্যাট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে তিনি বলেন, কেপিআইগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া যেখানে সেখানে খোলা তেল বিক্রি বন্ধসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাসীদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। কেপিআইগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ঢাকা আটটি জোনে বিভক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মোতায়েন করা আছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা বাহিনীগুলো তাদের প্রশিক্ষণ শেষ পর্যায়ে নিয়েছে এবং প্রয়োজন হলে দুই-একটি রিহার্সাল বা মহড়া দেওয়া হতে পারে। পুলিশের প্রায় দেড় লাখ, সেনাবাহিনী প্রায় এক লাখ, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ৩৫ হাজার, আনসার সাড়ে পাঁচ লাখের মতো, নৌবাহিনী সাড়ে চার হাজার ও কোস্টগার্ড চার হাজারের মতো সদস্য নির্বাচনি দায়িত্বে থাকতে পারেন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করে বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযানকে আরও বেগবান করা হবে। কিছু কিছু অস্ত্র এখনো বাইরে রয়েছে, সেগুলো দ্রুত উদ্ধার করতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে অস্ত্র খোয়া যাওয়ার বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত; তদন্তের পরই বিস্তারিত বলা যাবে। তিনি বলেন, আরাকানের দিক থেকে মাদকের চালান আসা কিছুটা কমেছে। তবে সেটা আশাব্যঞ্জক না। সমাজ থেকে মাদক দূর করাটা আমাদের সবার দায়িত্ব।
এদিকে গতকাল বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘ঢাকাবাসীর আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। ১৩ নভেম্বর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে, তা ভিত্তিহীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা প্রস্তুত আছি। ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। এপ্রিল-মে মাসে যে হারে ছিনতাই ও দিনের বেলায় চাপাতি হামলার ঘটনা ঘটত, এখন তা অনেক কমেছে। বিশেষ করে মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিক্ষোভ বা আন্দোলনেও পুলিশ সংযম দেখিয়েছে। আমরা কোনো মারণাস্ত্র বা লাঠি ব্যবহার না করেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। ডিএমপির নীতিই হচ্ছে কোনো নাগরিকের গায়ে হাত তোলা যাবে না। মানুষ যদি দাবি নিয়ে আসে, আমরা তাদের বুঝিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথেই সমস্যা সমাধান চাই।’
হাই কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘মানুষ বিচার পাওয়ার জন্য আদালতে যায়। আমরা কখনোই বিচারপ্রার্থীদের বাধা দিতে চাই না। তবে নির্ধারিত দিনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হবে।’