প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ফেব্রুয়ারি বা এপ্রিলের যে সময়েই (সংসদ) নির্বাচন হোক না কেন প্রস্তুতি রয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটির। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ এ মুহূর্তে ঘোষণা করা সম্ভব নয়। ভোটের সম্ভাব্য সময় নিয়ে সরকারের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন আলোচনা করে ধারণা পাওয়ার পরই সিদ্ধান্ত নেবে।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মধ্যে এপ্রিলের প্রথমার্ধে যে কোনোদিন ভোট নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা এবং লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে ভোটের বিষয়ে যৌথ ঘোষণার মধ্যে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সিইসি। এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, জাতীয় নির্বাচন যখনই হোক, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আগে আমাদের বলা হয়েছিল ডিসেম্বর থেকে জুন, আমরা সেই সময় মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি ও এগিয়ে যাচ্ছি। এপ্রিলের ভোটের বিষয়ে জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ হলেও ফেব্রুয়ারিতে ভোটের বিষয়ে ‘অফিসিয়ালি’ কোনো কিছু পায়নি নির্বাচন কমিশন। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমরা এখনো প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না। সরকারের সঙ্গে আমাদের যখন কথাবার্তা হবে, তখন সিদ্ধান্তে আসতে পারব। নির্বাচন নিয়ে এখন আবার নতুন ডাইমেনশন এসেছে উল্লেখ করে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, লন্ডনে যে ঘোষণাটা এসেছে অন্যদের মতো মিডিয়া থেকে যেটুকু জানা, এর বাইরে কিছু নেই। এনিয়ে আমি মন্তব্য করতে পারব না। ভিতরে কী আলাপ হয়েছে। শুধু যৌথ বিবৃতি যেটা দিয়েছে সেটা তো আন-সাইনড; এটাই বা কতটুকু জেনুইন তাও তো জানি না। কারও স্বাক্ষর থাকলে বুঝতাম এটা সরকারের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন, রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে একজন স্বাক্ষর করেছেন। তাহলে বুঝতাম এটা অফিসিয়াল ডকুমেন্ট। অফিসিয়ালি কোনো কিছু না এলে কিছু করা যাবে না। ইতিহাসের পেছনেও ইতিহাস থাকে, আলাপের পেছনেও আলাপ থাকে। ঘোষণা একটা হয়েছে, নিশ্চয়ই ভিতরে অনেক আলাপ হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, (ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন) এটা এখনো আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। নির্বাচনি আইন আরপিও অনুযায়ী ইসি গেজেটের মাধ্যমে ভোটের তারিখ ঘোষণা করবে। ছয় মাস, আট মাস আগে ওই তারিখে নির্বাচন হবে, এটা বলার বিধান আরপিওতে নেই। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা ঐতিহাসিক নির্বাচন উপহার দেওয়ার কথা বলেছেন। এ নির্বাচনটা করবে নির্বাচন কমিশন। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সবাইকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনটি করতে চাচ্ছেন। আমাদের বুঝতে হবে, পরিস্থিতিটা বিশেষ পরিস্থিতি। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে। ভোটের ৫০-৬০ দিন আগে সিডিউল ঘোষণার আভাস দেন সিইসি। যেদিন সিডিউল ঘোষণা করব তখন ভোটার তালিকা রেডি থাকতে হবে। যে তারিখে আমি সিডিউল ঘোষণা করব, যেদিন ইলেকশনস ডেট হয় তার মাস দুয়েক আগে সিডিউল হয়। সামনের কাজগুলোর বিষয়ে সিইসি জানান, ভোটার তালিকা আইনে সংশোধন করা হবে, ভোটার তালিকা চূড়ান্ত প্রায়। দল নিবন্ধন ও সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের মতো বড় কাজ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, প্রয়োজন হলে দেখা করতে পারেন তারা। সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। ইসির নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কয়েকটি দল- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি বলেন, আমাদের দলগুলো দেশের মঙ্গল চায়। রাজনৈতিকভাবে অনেক কথা বলতে হয়, আমি এটাকে রাজনৈতিকভাবে দেখি।
ইসি রেফারির ভূমিকায়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বদ্ধপরিকর : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ভোটের জন্য প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনে রেফারির ভূমিকায় থাকবে ইসি। এ লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে বদ্ধপরিকর সাংবিধানিক সংস্থাটি। গতকাল ঈদ-পরবর্তী মতবিনিময় সভায় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সম্মেলন কক্ষে এ মতবিনিময় সভা হয়। ঈদ-পরবর্তী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সিইসি। এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ কর্মরকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।