জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, আমাদের অবস্থান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নয়। তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন আছে, শ্রদ্ধা ও সম্মান আছে। রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন শুধু রাজনীতিবিদরা। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের বিচার, দলীয় নিবন্ধন বাতিল, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এনসিপি এ সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহিন সরকার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক অ্যাডভোকেট তারিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক আতিক মুজাহিদ, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আপনাদের যাদের ক্যান্টনমেন্টে কাজ, তারা ক্যান্টনমেন্টেই থাকুন। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ক্ষেত্রে আপনাদের যে অবদান রয়েছে, সেটা আমরা স্বীকার করি। কিন্তু আমরা বলতে চাই, গত ১৬ বছর আপনারা ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছেন। রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবেন শুধু রাজনীতিবিদরা।
তিনি বলেন, ইনক্লুসিভ ইলেকশনের যে বয়ান এখন দেওয়া হচ্ছে, আমরা প্রশ্ন রাখতে চাই- ২০১৪ সালে যখন ১৫৩টি আসনে ভোট হয়নি, তখন আপনাদের ইনক্লুসিভ ইলেকশন কোথায় ছিল? ২০১৮ সালে যখন ‘মিডনাইট ইলেকশন’ অনুষ্ঠিত হলো, তখন কোথায় ছিল আপনাদের ইনক্লুসিভ ইলেকশন? ২০২৪ সালে যখন ‘আমি ভার্সেস ডামি’ নির্বাচন এলো, তখন কোথায় ছিল আপনাদের ইনক্লুসিভ ইলেকশন?
তিনি আরও বলেন, যেই বাংলাদেশে দুই হাজার জুলাই শহীদের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, শাপলা-পিলখানা-ভারতের আগ্রাসনবিরোধী হত্যাকাণ্ড-আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত হয়নি, সেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না।
এনসিপির এ নেতা বলেন, পৃথিবীতে কোথাও এমন নজির নেই, যারা গণ অভ্যুথানের মধ্যদিয়ে পালিয়ে যায় তাদের আবার নির্বাচনের সুযোগ করে দেয়। আমরা কোনো নির্বাহী আদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ চাই না। আওয়ামী লীগ যত গণহত্যা করেছে, যত গুম করেছে, যত অপরাধ করেছে তার বিচার করেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি করেছি আমরা।
হাসনাত বলেন, কোনো আওয়ামী লীগকে বাংলার মাটিতে পুনর্বাসন করা হবে না। ভারতীয় আধিপত্যবাদ আর বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমরা কোনো ইনস্টিটিউশনের বিপক্ষে নই। বরং আওয়ামী লীগ যেসব ইনস্টিটিউশন ধ্বংস করেছে আমরা সেগুলো পুনর্গঠনের পক্ষে।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, যে ভাইয়েরা রাজপথে জীবন দিয়েছেন, তাদের রক্তের শপথ, আমাদের শরীরে একবিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ব্যাপারে কোনো বিচারিক কার্যক্রম শুরু করেনি। সরকারকে বলব, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আওয়ামী লীগের নামে কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানো যাবে না। অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম জুলাই আহতদের : ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করলে ঢাকা শহর অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে জুলাই আন্দোলনে আহতদের সংগঠন ‘ওয়ারিয়র্স অব জুলাই’। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান নিয়ে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটির নেতারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে আহতরা বলেন, আমরা এখনো হাসপাতালে কাতরাচ্ছি, পঙ্গুত্ব বয়ে বেড়াচ্ছি কিন্তু এতদিনেও আওয়ামী লীগের কোনো বিচার হয়নি। সরকারের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের একাংশ আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চাইলেও আরেক অংশ চায় না। বিভিন্ন কূটচাল আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু গত ১৫ বছরের ষড়যন্ত্র আমরা উৎখাত করতে পারলে এসব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আমাদের বেশিক্ষণ লাগবে না।
পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে তারা বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয় থেকে ঘোষণা অথবা সিদ্ধান্ত আসতে হবে। এ সময়ের মধ্যে কোনো প্রতিশ্রুতি না এলে সারা দেশ থেকে আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। যতদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা না হবে শহীদ মিনারে তাদের সে অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
তারা বলেন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টাসহ সব উপদেষ্টার অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। কেউ আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করলে তার ক্ষমতা থাকবে না। কোনো রাজনৈতিক দল যদি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করে তাদেরও আওয়ামী লীগের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের : আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ। গতকাল বেলা ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা।
সমাবেশে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার জন্য দুই হাজারেরও অধিক মানুষকে খুন করতে পারে, সেই আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার জন্য দুই লাখেরও অধিক আমাদের বিপ্লবী ভাইবোনদের খুন করতে, ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করতে ন্যূনতম কুণ্ঠাবোধ করবে না। প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে নিন্দা জানাই ছাত্র-জনতা। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা না থাকলে কিসের পরিকল্পনা আছে আপনার। এই রক্ত এবং জীবনের বিনিময়ে আপনারা সেখানে বসেছেন।’
জনগণকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘একটা গোষ্ঠী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানুষকে উসকে দিচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বলব আপনাদের যদি কেউ অন্ধকারে ঢিল মারতে বলে আপনারা ঢিল মারবেন না। কারণ অন্ধকারে ঢিল মেরে অনেকে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাচ্ছে। আমরা দেখেছি যে একজন সমন্বয়ক নেতা সরাসরি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। আমি বাংলার কোটি কোটি মানুষের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, আপনারা দেখেছেন এরকম কোনো বৈঠক হয়েছে, কোনো প্রমাণ আছে? তাহলে কেন আমরা সেটার ওপরে বিশ্বাস রাখব। কারও পোস্টকে কেন্দ্র করে দেশের জনগণকে অন্ধকারে ঢিল মারতে বলা হলে আর সেনসেটিভ একটা জায়গা ক্যান্টনমেন্ট সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে দেশের জনগণকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে উসকে দেওয়া হলে আমরা সেটাকে সমর্থন করতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে যেভাবে সেনাবাহিনী দেশ ও জনগণের পক্ষে ছিলেন বর্তমান সময় এবং ভবিষ্যতেও আমরা বিপ্লবী সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা জনগণের পক্ষে থাকবেন। গণহত্যাকারীদের পক্ষ আপনারা নেবেন না। রাজনীতি কারা করবে, নির্বাচন কারা করবে, নির্বাচন কবে হবে এগুলো ঠিক করার দায়িত্ব ক্যান্টনমেন্টের নয়। আমরা ক্যান্টনমেন্টের কোনো প্রতিনিধির কাছ থেকে প্রকাশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে এরকম কোনো বক্তব্য পাইনি। সুতরাং কেন আমরা তাদের দিকে আঙুল তুলব।’