আজ শুরু হচ্ছে তিন দিনের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। এ সম্মেলনে বাজেট ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ অর্থাৎ প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা। গত বছর এ ব্যয় ছিল ১ কোটি ৭৩ লাখ। এ ছাড়া এবারের ডিসি সম্মেলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের বিষয় প্রধান আলোচ্য হিসেবে থাকবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশীদ। গতকাল সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
করোনার পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন খাতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। তবে ডিসি সম্মেলনে মাত্র তিন দিনের জন্য এ ব্যয় নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
যদিও বিগত সরকারের চেয়ে এই ব্যয় কমেছে। ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট’ প্রতিষ্ঠান দিয়ে নানা সাজসজ্জা করায় ব্যয় বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে। এক সময় সচিবালয়ের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে সম্মেলন হতো। জায়গায় সংকুলানের অযুহাতে করোনার পর থেকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্থানান্তর হওয়াতেও খরচ বাড়ছে মনে করছেন অনেকে।
ডিসি সম্মেলনের বাজেট বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনের বাজেট ছিল ২ কোটি টাকার কিছু বেশি। তবে খরচ হয়েছিল ১ কোটি ৭৩ লাখ। এবার আমরা ১ কোটি ৭০ লাখ বা এর কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করব। আশা করছি এর থেকেও কিছু টাকা আমরা সাশ্রয় করতে পারব। এবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসিদের কোনো অধিবেশন থাকছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওনার (রাষ্ট্রপতি) শিডিউলের সঙ্গে মেলেনি। এর আগে সম্মেলন নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এবার মোট ৩৪টি অধিবেশনের মধ্যে কার্য-অধিবেশন ৩০টি। বাকি চারটি বিশেষ অনুষ্ঠান। এবারের ডিসি সম্মেলন মোট ৩৫৪টি প্রস্তাব উঠবে। আজ সকালে নিজ কার্যালয়ের শাপলা হলে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও জানান, ডিসি সম্মেলনকে সামনে রেখে এবার ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছ থেকে পাওয়া ১ হাজার ২৪৫টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩৫৪টি কার্যপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব প্রস্তাবের মধ্যে জনসেবা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ কমানো, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটন বিকাশ, আইনকানুন বা বিধিমালা সংশোধন জনস্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। বেশি সংখ্যক ২৮টি প্রস্তাব সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ডিসিদের পক্ষ থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের প্রস্তাব সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে আলোচনায়। মারণাস্ত্র এবং ছররা গুলি ব্যবহার নিষিদ্ধের প্রস্তাবও রয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের সার্কিট হাউসগুলোকে কেপিআইভুক্ত এলাকা ঘোষণার প্রস্তাবও রয়েছে। মোবাইল কোর্ট নিয়ে নানা কথা রয়েছে। মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর বিধিমালা তৈরির প্রস্তাবও উঠবে ডিসি সম্মেলনে। বিপ্লবোত্তর আইনশৃঙ্খলার বিষয়টিও শুরুতেই তোলা হবে। ভূমি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম জোরদার করা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম বাড়ানো, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করা হবে সম্মেলনে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ৩৮১টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ১৭৭টি সিদ্ধান্ত। বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ২০৪টি। বাস্তবায়নের হার ৪৬ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার পর পূর্ববর্তী সরকারের দর্শনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে বিগত ডিসি সম্মেলনগুলোর তুলনায় এ বছর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হার কম হয়েছে। তবে মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে গত বছরের সম্মেলনের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হার ৪৬ শতাংশ থেকে আরও বাড়বে। গত ডিসি সম্মেলনে নেওয়া বিভিন্ন স্থাপনার নাম বিশেষ কোনো ব্যক্তির নামে করার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হয়নি বলেও জানান তিনি। এবারের সম্মেলনে প্রধান আলোচ্য বিষয় নিয়ে সচিব বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম জোরদারকরণ; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম; স্থানীয় পর্যায়ে কর্ম-সৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন; সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্ন্যান্স; শিক্ষার মান উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ; পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ; ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও সমন্বয়ের বিষয়গুলোকে আলোচনার জন্য প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু হবে একটি ভিডিও প্রদর্শনের মাধ্যমে। যেখানে এই আন্দোলনটা কীভাবে হয়েছিল, কীভাবে আন্দোলনের ফল লাভ হলো সেই বিষয়গুলো সেখানে থাকবে।