উচ্চ মূল্যস্ফীতি অথবা প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে অর্থনীতি অনেকটাই স্থবির হয়ে গেছে। ভ্যাট বৈষম্য দূর করলে টাকার অভাব হবে না। চাঁদাবাজি হচ্ছে আগের মতোই। নিম্ন আয়ের মানুষের প্রধান খাবারে আর ভ্যাট-ট্যাক্স বসাবেন না। গরিব মানুষ হইচই করছে। বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন ৬৭ শতাংশ মানুষ করজালের বাইরে রয়েছে। ভোক্তার কাঁধে বাড়তি করের বোঝা: উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। গতকাল রাজধানীর গুলশানে এমসিসিআইর সম্মেলনকক্ষে জাগোনিউজ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার মনে হয়, এ সময়ে অর্থনীতিতে সফলতা নেই বললেই চলে। আমাদের মৌলিক সমস্যা যেমন উচ্চ মূল্যস্ফীতি অথবা প্রবৃদ্ধির ধীরগতির কারণে অর্থনীতি অনেকটাই স্থবির হয়ে গেছে। অন্যান্য যেসব সমস্যা আছে সেখানেও খুব একটা সফলতা নেই। ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।’
খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, বছরে কোটি টাকা আয় করেন, এমন ৬৭ শতাংশ মানুষ করজালের বাইরে রয়েছে। দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের আয় কোটি টাকার বেশি হলেও তারা করজালে নেই। এমন ফাঁপা করজাল বা ক্ষুদ্র করজাল দিয়ে কর-জিডিপির অনুপাত বাড়ানো যাবে না।
অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, সরকার ট্রাক সেল বন্ধ করে দিয়েছে। রিয়েল ইনকাম ফল করছে। গরিব লোক হইচই করছে। প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী বলেছেন, অনানুষ্ঠানিকভাবে কর না বাড়িয়ে যেভাবে চলছে চলতে দিন। কনসালটেশন শুরু করুন। আমরা এনবিআরের সঙ্গে আরও বেশি আলোচনা করতে চাই। কীভাবে কর জাল বাড়ানো যায় সেটা নিয়ে আমরা কাজ করব। বিকেএমই সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গণমাধ্যম থেকে শুনেছিলাম প্রতি রাতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেড় কোটি টাকা চাঁদা পেতেন। এখন তো পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু চাঁদাবাজির কি পরিবর্তন হয়েছে? এখনো যাত্রাবাড়ীসহ অন্য বাজারে চাঁদাবাজি হচ্ছে, কারা করছে, এটা বন্ধ করতে হবে। এটা বন্ধ না হলে মূল্যস্ফীতি কমবে না, কারণ পণ্যের দাম বাড়তি থাকবে। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, কর বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাকেও বেশি দামে খাবার কিনতে হবে। কম দামে বিস্কুট, কেকসহ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য মিলবে না। কৃষকের মতো সাধারণ মানুষও ভুগবে। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দেশের শ্রমজীবী, প্রান্তিক কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সরকারকে এটা চিন্তা করতে হবে। বাংলাদেশ অটো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা এক মাস ধরে আন্দোলন করছি ভ্যাট কমানোর জন্য। এখনো মাঠে আছি। জাগো নিউজের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম জিয়াউল হকের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে বক্তব্য দেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ, রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য রেজাউল হাসান, ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ, বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল, ক্যাব সহসভাপতি নাজের হোসাইন, এসিআই ফুডসের প্রধান ব্যবসা কর্মকর্তা ফারিয়া ইয়াসমিন, এসএমসি এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফ উদ্দিন নাসির, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা, সাবেক ব্যাংকার সাইফুল হোসেন ও সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন।