অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে ছয় সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট। বাছাই করা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম, যা নিয়ে এ মাসেই হতে যাচ্ছে রাজনৈতিক সংলাপ। এই সংলাপের মাধ্যমেই আগামী নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সংস্কার কমিশনের রিপোর্টগুলো থেকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারগুলো পৃথক করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করা যায়, এমন স্বল্পমেয়াদি সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে ঐকমত্য স্থাপনে জোর দেওয়া হবে। এরপর নির্বাচিত সরকার দীর্ঘমেয়াদি যেসব সংস্কার করবে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।
এর পাশাপাশি চলতে থাকবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারিক কার্যক্রমসহ সরকারের প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানায়, এরই মধ্যে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করে সংস্কার কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কমিশনের রিপোর্ট দুই ভাগে ভাগ করা হবে। একটি ভাগে আশু সংস্কার, যেগুলো দ্রুত করে ফেলা সম্ভব সেগুলো থাকবে। অন্য ভাগে কাঠামোগত সংস্কার, যেগুলোর জন্য প্রক্রিয়াগত জটিলতা রয়েছে সেগুলো থাকবে। যে সংস্কারগুলো সরকার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করতে পারবে, সেগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহিত করে সংস্কার করা হবে। যে সংস্কারগুলো ব্যাপক, সেগুলোর জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা সাপেক্ষে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেদিন থেকেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ শুরু করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো আরও জানায়, চলতি মাসের শুরুতে শেখ হাসিনার ভাষণের কারণে দেশে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সরকার সেটিকে আর বাড়তে দিতে চায় না। অন্তর্বর্তী সরকারের এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংস্কার শেষে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বিচারপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
গণহত্যার বিচার সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে সরকারের ওপর। নির্বাচনের সময়সীমা স্পষ্ট করার বিষয়েও দেশের রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের আকাক্সক্ষা রয়েছে। এরই মধ্যে ইউরোপীয় কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনের রূপরেখা জানতে চেয়েছে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পৃথক চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিপ্রায় জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ড. ইউনূসের সরকারকে ব্যর্থ করতে যে দেশিবিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে, সেটি মোকাবিলা করার উপায় হচ্ছে দেশের মানুষকে নির্বাচনি আবহে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। এর ফলে দেশিবিদেশি চক্র যেসব গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে সরকার ও রাষ্ট্রে অস্থিরতা ছড়ানোর প্রয়াস চালাচ্ছে, তা থেমে যেতে পারে। উপরন্তু দেশের মানুষ নির্বাচনি আবহে চলে গেলে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও দূর হবে, যা ব্যবসাবাণিজ্যে আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
নির্বাচনি অভিযাত্রা নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে সম্প্রতি প্রেস ব্রিফিংয়ে ধারণা দিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন, ‘এই ছয়টি কমিশন গঠন করাই হয়েছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে আমাদের উত্তরণকে সামনে রেখে এবং সঙ্গে কিছু জরুরি রাষ্ট্র সংস্কারের মীমাংসা করার জন্য। আমরা আশা করছি, এই আলোচনা ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে শুরু হবে। সম্ভব হলে সেটি রোজার মধ্যেও চালিয়ে নেওয়া হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব (নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে) সংস্কারের ক্ষেত্রে করণীয় কী তা ঠিক করা হবে।’