দেশের প্রথম সেনাপ্রধান ও মুক্তিযুদ্ধে ৩ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ (বীরউত্তম) আর নেই। গতকাল সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী জিয়াউর রহমান মনি তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বাদ জোহর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কাজী আবদুল হামিদ উচ্চবিদ্যালয়ে তাঁর জানাজা হয়। বাদ আসর আরেক দফা জানাজা হয় ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় মসজিদে। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল এক শোক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন কে এম সফিউল্লাহ। তিনি আরও বলেন, সফিউল্লাহ ছিলেন জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় প্রধান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘এস’ ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ‘বীরউত্তম’ খেতাব পেয়েছেন তিনি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন কে এম সফিউল্লাহ। উল্লেখ্য, কে এম সফিউল্লাহর জন্ম ১৯৩৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে।
নামাজে জানাজা : মরহুম মেজর জেনারেল কে এম সফিউল্লাহর নামাজে জানাজা গতকাল বিকাল ৪টায় ঢাকা সেনানিবাসের সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। ওই জানাজায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন (অব.), মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম (বীরপ্রতীক), সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌ-বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন, প্রাক্তন সেনাবাহিনী প্রধানগণ, ঢাকা ও মিরপুর সেনানিবাসের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জানাজা শেষে মরহুমের মৃতদেহ বনানী সামরিক কবরস্থানে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং সেই সঙ্গে তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।
তিনি ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, কানাডা, সুইডেন আর ইংল্যান্ড। ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন।