চলমান বিচারিক সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে গতকাল মৌলভীবাজারের দুসাই রিসোর্টে এক রিজিওনাল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান প্রধান বিচারপতি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণসহ বিচারসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা বাড়াতে করণীয় নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম। সেমিনারে সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, চলমান বিচারিক সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যেসব কার্যক্রম চলমান, তারই অংশ হিসেবে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এ আদালতগুলো বাণিজ্যিক বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা সময়োপযোগী ও কার্যকর আইনি প্রতিকার পাবেন, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং বেশি পরিমাণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করবে। প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, এ উদ্যোগ বিচার ব্যবস্থাকে পরিবর্তনশীল অর্থনীতির চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এবং বাংলাদেশকে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও বিনিয়োগবান্ধর গন্তব্য হিসেবে উপযোগী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সংবিধানের ষষ্ঠ অংশের প্রথম অধ্যায়ের বেশকিছু বিধান কখনো সেভাবে প্রয়োগ করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে নতুন করে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
তিনি সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মের সভাপতি বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামকে সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের আওতায় অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ এবং ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে হাই কোর্ট বিভাগের অধিবেশন আয়োজনের সম্ভাবনা অনুসন্ধানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। সংবিধানের ১০৭ অনুচ্ছেদের ৩ ও ৪ দফার সম্মিলিত পাঠের আওতায় প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে বলে মতামত দেন প্রধান বিচারপতি। বিচার বিভাগ সংস্কারে প্রধান বিচারপতির ঘোষণা করা রোডম্যাপ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এরই মধ্যে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতিতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নসহ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে প্রধান বিচারপতি ফেলোশিপ চালু করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।