‘লেগেছে বাঙালির ঘরে ঘরে এ কি মাতন দোলা, লেগেছে সুরেরই তালে তালে হৃদয়ে মাতন দোলা! ... এ বুঝি বৈশাখ এলেই শুনি-মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে...’
আজ পয়লা বৈশাখ। আর পয়লা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ মানেই দেশের অলিগলিতে বেজে চলা জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা মাকসুদুল হক ম্যাকের গাওয়া অসম্ভব জনপ্রিয় সেই গান ‘মেলায় যাই রে...’। ১৯৯০ সালের মেগা হিট অ্যালবামের টাইটেল গান এটি। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীসহ বিভিন্ন বয়সিরা এ গানে নববর্ষ উদযাপন করেন। বাংলা নববর্ষ যেন এ গানটি ছাড়া উদযাপন পূর্ণ হয় না। গান তৈরির হিসাবে এবার প্রায় ৩৫ বছর হতে চলছে ‘মেলায় যাই রে...’। এত বছর পরও গানটি মানুষের স্মৃতিপটে আষ্টেপৃষ্ঠে রয়েছে ভেবে ভীষণ আনন্দিত গানটির স্রষ্টা মাকসুদুল হক ম্যাক। তিনি গানটি নিয়ে বলেন, ‘গানটির ভাবনা আমার মাথায় এসেছিল নববর্ষকে ঘিরে। আমাদের রণসংগীত আছে, জাতীয় সংগীত আছে, অনেক ধরনের বিশেষ সংগীতই হয়তো আছে, কিন্তু কোনো উৎসব সংগীত ছিল না। ‘মেলা’ই সম্ভবত আমাদের একমাত্র উৎসব সংগীত।’ তিনি বলে যেতে থাকেন- ‘মেলায় যাইরে’র মতো কালজয়ী গান একবারই সৃষ্টি হয়, বারবার নয়। গানটি ৩৫ বছর ধরে শ্রোতাদের মনে গেঁথে আছে, এটা সত্যিই বিস্ময়। অনেকে আমাকে চেনেও না। নামও জানে না। এখন এমন হয় কেউ একজন জিজ্ঞাসা করছে ‘মাকসুদ ও ঢাকা’কে রে? তখন কেউ বলে, ‘ওই যে মেলায় যাইরে গানটা যে গাইছে, সে-ই মাকসুদ।’ গানটির রেকর্ডিংয়ের অভিজ্ঞতার স্মৃতি হাতড়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গানটি করি ১৯৮৭ সালের শেষ দিকে। প্রথমত গানটি একবারে লিখতে পারিনি। সময় লেগেছিল দুই মাস। লেখার পর সাত-আটবার সংশোধন করেছি। এরপর সুর করেছি। রেকর্ডিং এক দিনে হয়নি। সময় লেগেছে। ব্যান্ডের সদস্যদের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি কত কিছু যে হয়েছে।’ গানের কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গানে সেই চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছি, যা প্রতি বৈশাখে আমাদের চোখে পড়ে। অনেক শব্দের কাটিকুটি শেষে বেরিয়ে এসেছিল কিছু ছন্দোবদ্ধ কথা। গানটি গেয়েছি মনপ্রাণ উজাড় করে। সংগীত কোনো কাজ নয়, এক ধরনের সাধনা। যাঁরা গান করেন তাঁরা ভালো করেই জানেন, প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে কতটা শ্রম-ঘাম ঝরাতে হয়। যাই হোক, গানটি রেকর্ড করার পর আমি, ফোয়াদ নাসের বাবু, পিয়ারু খান, লাবু রহমান, সেকেন্দার আহমেদ খোকা- প্রত্যেকেই অন্যরকম এক সৃষ্টির স্বাদ পেয়েছিলাম।’ ছোটবেলা থেকেই ছায়ানটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মাকসুদ। তখন ঢাকায় ব্যাপক পরিসরে পয়লা বৈশাখ একমাত্র রমনা বটমূলেই হতো। গ্রামগুলোতে সরগরম হলেও ঢাকায় বৈশাখী মেলা ছিল নিষ্প্রাণ। তখনই তাঁর মনে হলো বৈশাখী উৎসবে মানুষের ঢল নামাতে হবে। ‘এই মেলার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু বলতে পারব এমন ভাবনা থেকেই গানটি তৈরি করেছি। আমার বিশ্বাস, এ গানের মাধ্যমে মানুষের সব ইন্দ্রিয় ছুঁয়ে যেতে পেরেছি; এমনকি জাগাতে পেরেছি আবেগও। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের আবেগ ও ইন্দ্রিয়কে জাগ্রত করতে পারলে একটি গানের পক্ষে দীর্ঘায়ু লাভ করা সম্ভব হয়ে ওঠে। এ কারণেই ‘মেলা’ এমন শক্তি হয়ে উঠতে পেরেছে।’