বগুড়ায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে যমুনা নদীতে বন্যার পূর্বাভাস দেখা দিয়েছে। টানা বৃষ্টির ফলে জেলার বিভিন্ন নদ নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ভারি বৃষ্টিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌর এলাকায় বাঙালি নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের একটি অংশে কিছু ব্লক ধ্বসে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে বন্যার পানি ঢুকে গেলে বাঙালি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। এজন্য বন্যার আগেই দ্রুত সংস্কার কাজ চায় এলাকাবাসী।
জানা গেছে, গত কয়েক দশক ধরে জুন মাসে পানি বৃদ্ধি পায় বগুড়ার যমুনা, বাঙালি, করতোয়া নদীতে। পানি বৃদ্ধির পর জুলাই আগস্ট মাসে গিয়ে বন্যা দেখা দেয়। এবারো বন্যার পূর্বাভাস দেখা যাচ্ছে। গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে নদীগুলোতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতে স্রোত শুরু হয়েছে। এপ্রিল মাসেও যে সব এলাকা শুষ্ক ও পানি শুণ্য ছিলো সেসব স্থানে এখন পানি থৈ থৈ করছে। যে কোন সময় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বড় ধরনের বন্যা দেখা দিতে পারে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাঙালি নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনে বৃষ্টিতে বাঙালি সেতুর উত্তর পাশে হিন্দুকান্দি গ্রামের শিল্পপাড়া এলাকায় নদীতীর সংরক্ষণ কাজে ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে ১০ মিটার এলাকার আরসিসি ব্লক ধ্বসে গিয়ে বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দুইটি বসতবাড়ির পাকা মেঝেতে ফাঁটল ধরেছে। এতে আতঙ্কিত হয়েছেন এলাকাবাসী। বৃষ্টির পানির স্রোতে এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে বেশকিছু পাকা বসতবাড়ি বাঙালি নদীতে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে ধ্বসের ফলে এ পাড়ার একমাত্র সড়কেরও একাংশ ভেঙে গেছে। ফলে সড়ক দিয়ে পৌর এলাকার হিন্দুকান্দি গ্রামের শতাধিক এলাকাবাসী যাতায়াত করতে পারছেন না। এখানে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় হিন্দুকান্দি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার এলাকাবাসী বেশ আতঙ্কে বসবাস করছেন।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার হিন্দুকান্দি গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গত বছরও বন্যায় এই এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিলে স্থানীয় প্রশাসন কে জানানো হয়। সেটি মেরামতও করা হয়। কিন্তু এবছর বন্যার আগেই ভাঙ্গন ধরেছে। যমুনা নদীর তীরে থাকা হিন্দুকান্দি গ্রামের ভাঙ্গন ঠেকানো না গেলে আসছে বন্যায় পুরো গ্রামের প্রায় অর্ধেকই নদীতে তলিয়ে যাবে। গ্রামে প্রায় দশ হাজার মানুষের বসবাস।
এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে উপজেলার সদর ইউনিয়নের যমুনা নদীর পাশের গ্রাম পারতিত পরল গ্রামের হাজিপাড়া এলাকায় সড়কে ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেনের নীচের মাটি সরে গিয়ে বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়ে বেশকিছু পাকাবাড়ি ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। দ্রুত মেরামত কাজ শুরু না করলে সারিয়াকান্দি হাটশেরপুর সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
বগুড়ার সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার হিন্দুকান্দি গ্রামের সাব্বির আহম্মেদ চম্পক জানান, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হিন্দুকান্দি গ্রামের বাঙালি নদীতীর সংরক্ষণ কাজের সিসি ব্লক ধ্বসে গিয়ে বিশালাকার গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দুইটি আধাপাকা বাড়ীর মেঝেতেও ফাঁটলের সৃষ্টি হয়েছে। অতিদ্রুত এখানে মেরামত কাজ না করলে বাড়িগুলো বাঙালি নদীতে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, বাঙালি নদীর তীরসংরক্ষণ কাজের যেখানে ধ্বসের সৃষ্টি হয়েছে সেখানে মেরামত কাজ দ্রুত শুরু করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর স্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা সেখানে দ্রুত মেরামত কাজ শুরু করবেন।