গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। এ সময় শিক্ষার্থীরা আমার খাতার পেজ গেল কই? মার্ক টেম্পারিং এর বিচার চাই, প্রশ্ন ফাঁসের বিচার চাই, প্রশাসন জবাব চাই লেখা সংবলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন। ওই বিভাগের ১৭ জন শিক্ষার্থী অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ১৭ জনের মধ্যে ৯ জন ছাত্র ও ৮ জন ছাত্রী। এদের সবাই চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অ্যানিম্যাল সাইন্স এন্ড ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান হুর-ই-জান্নাত জ্যোতি শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন আচরণ, পরীক্ষার উত্তরপত্রের ভেতর থেকে চার থেকে পাঁচটি পৃষ্ঠা ছিঁড়ে সাদা কাগজ ঢুকিয়ে দেয়া, অন্য কোর্সের শিক্ষকদের থেকে মার্ক না নিয়ে নিজের ইচ্ছা মত ফলাফল প্রকাশ, পরীক্ষার আগে পছন্দের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন এ ধরনের প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এনিমেল সাইন্স এন্ড ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া আফরোজকে প্রোটোজ্যুলজি ও টক্সিকোলজি দুটি কোর্সের পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি ওই কোর্স দুটির কয়েকটি উত্তরপত্রের মধ্যে পেজ ছেড়া পান। দ্বিতীয় পরীক্ষা হিসেবে ওই শিক্ষক লার্জ এনিমেল মেডিসিন ও ডেইরি কেমিস্ট্রি এন্ড মাইক্রোবায়োলজি কোর্সের কয়েকটি উত্তরপত্রের মধ্যে চারটি করে পেজ ছেড়া দেখতে পান। এ বিষয়ে আরজে আফরোজ উপাচার্য বরাবর লিখিতভাবে জানান।
গত মাসের ২১ তারিখে ওই বিভাগের ১৫ জন শিক্ষার্থী উপাচার্য বরাবর ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তাদের মধ্যে অশোভন আচরণ ও মানসিক হেনস্তা ও কাছের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র দেওয়ার প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই সকল অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন আনিসুর রহমানকে সভাপতি ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এস এম গোলাম হায়দারকে সদস্য সচিব করে প্রশাসন ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন কৃষি অনুসদের ডিন জুলহাস আহমেদ জুয়েল, প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজিব, ছাত্র উপদেষ্টা মো. বদরুল ইসলাম, আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মানসুরা খানম, কৃষি বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম। এই কমিটি পাঁচটি বৈঠক সম্পন্ন করেছেন। ২৮ মে অনুষ্ঠিত হয় সর্বশেষ বৈঠক।
তদন্ত কমিটির সর্বশেষ বৈঠকের পর এনিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান হুর-ই-জান্নাত জ্যোতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আরিফুজ্জামান রাজিবের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ এনে তদন্ত কমিটি থেকে তাকে বাদ দেয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
ওই রাতে এনিম্যাল সাইন্স এন্ড ভেটেনারি মেডিসিন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী হুর-ই-জান্নাত জ্যোতিকে হেনস্তার প্রক্টরের বিরুদ্ধে মিছিল দেয়।
অন্যদিকে বুধবার (৩০ এপ্রিল) বেলা ১২টায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা ন্যায় বিচারের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ন্যায়বিচারের আশ্বাসে তারা অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ায়।
অবস্থানরত চতুর্থ বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মহিন হোসেন বলেন, পরীক্ষার আগে হুর ই জান্নাতি ম্যাম বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন দেন। ওই শিক্ষার্থী একই বিভাগের তার এক বন্ধুকে মেসেঞ্জারে পাঠায়। পরবর্তীতে তার বন্ধুর সাথে মনোমালিন্য হলে সে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের কাছে সেটা প্রকাশ করে। যে প্রশ্নপত্র তাদের দিয়েছে পরীক্ষার পরে দেখা গেল পরীক্ষার যে প্রশ্নপত্র তার সঙ্গে হুবহু মিল। এছাড়া ম্যাম তার কাছের কয়েকজন শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য সকলের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের কাছে লিখিত অভিযোগ করলে আমাদের ডেকে নিয়ে ম্যাম বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন। বিভাগের অভিযোগের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমাদের কয়েকজনের উত্তরপত্রের চারটি পেজ ছেড়া। এমনকি আমাদের এক শিক্ষার্থী মেয়ে শূণ্য পেয়েও ফাইনাল পরীক্ষায় সে এ প্লাস পেয়েছে এটা কি করে সম্ভব? আমরা চেয়ারম্যান ম্যামের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি এবং আমাদের বিরুদ্ধে যে অন্যায় করা হয়েছে তার উপযুক্ত বিচার চাই।
অবস্থান কর্মসূচি পালনকারী শিক্ষার্থী সাগর রায় বলেন, আমাদের এক শিক্ষক আমাদের ইনকোর্স, মিডটার্মসহ সকল পরীক্ষা নিয়েছে। ওই শিক্ষকের কোন ফলাফল না নিয়েই চেয়ারম্যান ম্যাডাম তার মতো করে তার স্বাক্ষর নকল করে পরীক্ষক নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে ফলাফল জমা দিয়েছেন। আমরা ওই শিক্ষকের কাছেই জানতে পেরেছি তিনি ওই ফলাফল জমা দেননি এবং ওই ফলাফলে স্বাক্ষর করেননি।
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত কমিটি রিপোর্ট এখন পর্যন্ত আমার কাছে আসেনি। রিপোর্ট আমার কাছে আসার পরে আমরা দেখব যে অভিযোগ সত্য না মিথ্যা। তারপর আমরা একটি সিদ্ধান্তে যাবো। ইতিমধ্যে ওই ম্যাডাম (বিভাগের চেয়ারম্যান হুর ই জান্নাত জ্যোতি) বলেছেন, তদন্ত কমিটিকে পুনঃগঠন করার জন্য। সেদিকটাই আমরা চিন্তা ভাবনা করবো। আমরা আশা করছি আলটিমেটলি যেটা সত্য সেটাই বেরিয়ে আসবে। সত্য বেরিয়ে আসলে একোর্ডিং টু দা লস যেভাবে ব্যবস্থা নেওযার সেভাবে ব্যবস্থা নিবো।
শিক্ষার্থীরা যে দাবি করছে সেই দাবিগুলো নিয়েই তদন্ত হচ্ছে। প্রয়োাজন হলে একটা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি করা হবে। সেটির পরে আমরা একটা ফাইনাল ডিসিশনে যাবো। ডেফিনেটলি যে সত্যটা বের হয়ে আসবে আমরা সেটার পক্ষেই থাকবো।