ঢাকাই চলচ্চিত্রে উচ্চশিক্ষিত তারকার সংখ্যা হাতে গোনা। আবার অল্পদিনের ব্যবধানে খ্যাতির চূড়ায় ওঠায় নিয়মিত পড়াশোনা থমকে রয়েছে অনেকের। সেজন্য অনেক তারকাই নিজেদের শিক্ষাজীবন নিয়ে খুব একটা মুখ খোলেন না। টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রের উল্লেখযোগ্য তারকাদের ‘কার বিদ্যা কতদূর’। বিষয়টি তুলে ধরেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদ
মঞ্চ ও নাটকমাধ্যমের বেশির ভাগ শিল্পীই উচ্চশিক্ষিত। একই সঙ্গে সিনেমার সিনিয়র তারকাদের অনেকেই উচ্চশিক্ষায় সার্টিফিকেটধারী। নায়করাজ রাজ্জাক কলকাতায় পড়াশোনা করেছেন। সেখানে তিনি বাংলায় অনার্স করেন বলে একটি সূত্র জানায়। শাবানা পড়তেন গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার একটি স্কুলে। পারিবারিক কারণে মাত্র ৯ বছর বয়সে তাঁর শিক্ষাজীবনের ইতি ঘটে। পর্দায় অভিষেক ১৪ বছর বয়সে। ববিতা পড়াশোনা করেছেন যশোর দাউদ পাবলিক বিদ্যালয়ে। সেখানে অধ্যয়নকালে বড় বোন অভিনেত্রী সুচন্দার হাত ধরে চলচ্চিত্রে প্রবেশের সূত্রে পরিবারসহ চলে আসেন ঢাকায়। গেন্ডারিয়ায় শুরু হয় কৈশোরের বাকি সময়। ১৯৬৭ সালে জহির রায়হানের ‘সংসার’ চলচ্চিত্রে নায়িকার ছোট বোনের চরিত্রে অভিনয় করেন এবং ১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ চলচ্চিত্রে প্রথমবার নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়লেও ববিতা ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে শিক্ষিত করে তোলেন। দক্ষতা অর্জন করেন ইংরেজিসহ কয়েকটি বিদেশি ভাষায়। চিত্রনায়ক আলমগীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়েছেন। পরবর্তীতে পাকিস্তানের করাচিতে তিনি পড়াশোনা করেছেন। প্রয়াত অভিনেত্রী কবরী স্কুলজীবনেই প্রখ্যাত প্রয়াত চলচ্চিত্রনির্মাতা সুভাষ দত্তের হাত ধরে চলচ্চিত্রে আসেন। পরে তিনি অভিনয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন স্নাতকসম্পন্ন। অভিনেতা ও পরিচালক সোহেল রানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সেসময় ছাত্র রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। প্রয়াত খ্যাতিমান অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপি করিম বুয়েট থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতকোত্তর করেছেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে পা রাখেন শাবনূর। নায়িকা হিসেবে শুরুটা স্কুল পেরোনোর আগেই ছিল। অভিনয়ের পাশাপাশি শাবনূর পড়াশোনা চালিয়ে যান এবং আইএ পাস করেন বলে জানা গেছে। এরপর অস্ট্রেলিয়ায় চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়াশোনা করেন। পূর্ণিমার চলচ্চিত্র জগতে পথচলা শুরু হয় ১৯৯৭ সালে জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘এ জীবন তোমার আমার’ ছবির মাধ্যমে। তখন তিনি মাত্র নবম শ্রেণিতে পড়তেন। অভিনয় জগতে আসার পর পূর্ণিমার পড়াশোনা সম্পর্কে আর কিছু জানা যায়নি। পূজা চেরী ২০১২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে যখন চলচ্চিত্রে আসেন তখন তিনি মগবাজার গার্লস হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, পরে এ স্কুলেই মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেন, বিজনেস স্টাডিজ গ্রুপ থেকে ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০২১-২২ সালে সিদ্ধেশ্বরী কলেজ থেকে আর্টস গ্রুপে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম নাট্যকলায় স্নাতক শেষ করে উচ্চতর পড়াশোনা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। মডেল অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমু করছেন পিএইচডি। চিত্রনায়ক-প্রযোজক অনন্ত জলিলের দাবি- যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করেছেন তিনি। খল অভিনেতা মিশা সওদাগর পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা নিয়ে। একই প্রতিষ্ঠানে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় পড়েছেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে মাস্টার্স পাস করেছেন বলে জানিয়েছেন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স করেছেন অভিনেত্রী রুনা খান। ফিল্ম স্টাডিজের ওপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন অভিনেত্রী স্বাগতা। চিত্রনায়ক রিয়াজের কলেজজীবন শুরু হয় যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে এইচএসসিতে ভর্তির মাধ্যমে। সেখান থেকে এইচএসসি পাস করে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ এয়ারফোর্স একাডেমিতে ১৯৯১ সালের জুন পর্যন্ত অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি সম্পন্ন করেন। চিত্রনায়িকা ববি হক আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ করেছেন। চিত্রনায়িকা রত্না জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেছেন। এ ছাড়াও রত্না এলএলবি পাস করেছেন। তিনি ঢাকা ক্যাপিটাল ল’ কলেজ থেকে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী হিসেবে এলএলবি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এ কলেজের পাসকৃত শিক্ষার্থীর মধ্যে রত্না মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। অভিনেত্রী ও মডেল পিয়া জান্নাত আইনজীবী পেশায় রয়েছেন। নায়িকা আঁচল স্ট্যামফোর্ড থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। অর্চিতা স্পর্শিয়া ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করেছেন। বর্তমানে দুই বাংলার প্রিয় মুখ জয়া আহসান ব্যবস্থাপনা বিষয় নিয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন ইডেন মহিলা কলেজ থেকে। লাক্স সুন্দরী বাঁধন বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ থেকে বিডিএস (গ্র্যাজুয়েশন) সম্পন্ন করেছেন। অভিনয়শিল্পী জোভান একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করছেন বলে জানা গেছে। বিদ্যা সিনহা মিম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও বেশিদিন ক্লাস করতে পারেননি। নতুন করে ভর্তি হয়েছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথইস্টে। সেখান থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করছেন এ অভিনেত্রী। তমা মির্জা আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক খোঁজ নিয়েও জানা যায়নি চিত্রনায়িকা পরীমণির শিক্ষাজীবনের কথা। তবে গুগল উইকিপিডিয়া থেকে জানা যায়- তিনি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে সম্মানের ছাত্রী ছিলেন। অন্যদিকে চিত্রনায়ক সাইমন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি থেকে করেছেন বিএসএস (ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স)। চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে জানিয়েছেন, বড় নায়ক- নায়িকারা তাদের শিক্ষাজীবন নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। ব্যস্ততা ও খ্যাতির খাতিরেই পড়াশোনা থেকে ক্রমে দূরে সরে যান তারা। চিত্রনায়িকা মৌসুমীর শিক্ষাজীবন নিয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। চিত্রনায়ক শাকিব খান, অনেক কাছের মানুষও জানেন না তাঁর শিক্ষাজীবন সম্পর্কে। তাঁর এক ছবির প্রযোজক জানান, শাকিব খানের কাছের মানুষদের বলতে শুনেছেন, তিনি উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন এবং প্রায়ই তাকে বলতে শোনা যায়, তিনি প্রকৌশলী হতে চেয়েছিলেন। কয়েকটি সাক্ষাৎকারে অবশ্য তিনি নিজেকে স্নাতক পাসও দাবি করেছিলেন। নায়িকা অপু বিশ্বাস পড়েছেন এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুলে। এরপর আলোর মেলা, ক্রিসেন্ট হাইস্কুল এবং সব শেষে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। নায়িকা সিমলা শৈলকুপা গার্লস স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শৈলকুপা সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন। কিন্তু দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন বলে ইতি টানেন পড়াশোনার।