দুধের গ্রাম কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ছিলোনিয়া। এটিসহ আশপাশের ১২টি গ্রামে ঘরে ঘরে এক সময় দুধ উৎপাদন হতো। গরু পালন, দুধ বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ছিলোনিয়া গ্রামে আড়াই শতাধিক পরিবার দুধ উৎপাদন করতেন। তবে গো খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে লোকসানে পড়েন খামারিরা। এরপর অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। শুধু এ গ্রামেই ৬ বছরে আড়াই শ খামারের মধ্যে ২০০টি বন্ধ হয়ে গেছে। দুধের গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিলোনিয়া এখন অনেকটা নীরব-নিস্তব্ধ। এর পাশের গজারিয়া, হাপানিয়া, উৎসব পদুয়া, মাতাইনকোট, দোসারি চৌ, জামমুড়া, শাসনমুড়া, আটিটি, বাটোরা গ্রামেও এখন আর তেমন দুধ সংগ্রহ ও বিক্রির উৎসব হয় না। স্থানীয়রা জানান, ছিলোনিয়া গ্রামে আগের মতো উৎসবের আমেজ নেই, অনেক খামার খালি পড়ে আছে। কোনো খামারে আগে ২০টি গরু ছিল। এখন সেখানে দুটি আছে। খাবার দেওয়া পাত্র খালি পড়ে আছে। কোথাও খালি পাত্রে বাড়িতে ব্যবহার্য জিনিসপত্র রাখা হয়েছে। কোথাও রাখা হয়ে মাছ ধরার কনুই জাল কিংবা ছাই।
খামারি নাইমুল ইসলাম বলেন, দুধের দাম কম খাদ্যের দাম বেশি। তাই অনেকে এ ব্যবসা থেকে সরে যাচ্ছেন। খামারি জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রতি কেজি খাদ্যের দাম ৫৫ টাকা। পাইকারি এক কেজি দুধের দাম ৪০ টাকা। লেবারের দাম আগে ছিল ৩০০ টাকা, এখন ৭০০ টাকা। আয় ৩ হাজার হলে খরচ ৫ হাজার টাকা।
খামারি সেলিম মিয়া বলেন, তার ৮টা দুধের গাভি ছিল। খাদ্যের দাম বাড়ায় বিক্রি করে দিয়েছেন। সফিকুর রহমান বলেন, আগে তার ১৮টা গরু ছিল। এখন আছে একটা।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল আজিজ বলেন, ২০০৬ সালে ডেইরি ফার্ম শুরু করেন তিনি। ২০১৯ পর্যন্ত ভালো অবস্থা ছিল। ২০২০ সালে করোনার ধাক্কায় পিছিয়ে যেতে থাকেন। লস দিতে দিতে অনেকে খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এ এলাকায় ২৫০টি খামার ছিল, এখন তা ৬০টিতে চলে এসেছে। সরকার দৃষ্টি না দিলে বাকি খামারিরাও হারিয়ে যাবেন। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের প্রশিক্ষণ অফিসার ডা. মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন বলেন, কুমিল্লা জেলায় দুধের বার্ষিক চাহিদা ৫.৩৪ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদন ৫.০৩ লাখ মেট্রিক টন। উৎপাদনে বাড়াতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, দানাদার খাদ্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। খামরিরা দুধের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। এ ছাড়া তারা কোনো ভর্তুকিও পাচ্ছেন না। খামারের বিদ্যুৎ বিল কৃষির আওতায় আনা এবং খাদ্যে ভর্তুকির বিষয়ে আমাদের উপদেষ্টা মহোদয় চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া লোকসান কমাতে আমরা কৃষকদের ঘাস জাতীয় খাদ্যে গুরুত্ব দিতে বলেছি।