গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় আধাপাকা বোরো ধানে বাদামি (কারেন্ট) পোকার আক্রমণ গুরুতর আকার ধারণ করেছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনোভাবেই প্রতিরোধ হচ্ছে না এ পোকার আক্রমণ। ফলে ক্ষতির আশঙ্কায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, একদিকে জমি চাষ, চারা রোপণ, সেচ, সার, কীটনাশক ও ধান কাটার মজুরি বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই নাভিশ্বাস উঠেছে। এর মধ্যেই আবার তাদের স্বপ্নের বোরো ধান না পাকতেই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে বাদামি (কারেন্ট) পোকার আক্রমণ। তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। এ পোকার আক্রমণের কারণে পাকার আগেই ধান গাছ ও শিষের ধান শুকিয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে। কাজে আসছে না কৃষি কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপও। কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন। এ বছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে এ উপজেলায়। সাঘাটা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১৪ হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৫৭ হেক্টরে স্থানীয় জাতের, ৬ হাজার ২৮৮ হেক্টরে হাইব্রিড ও ৭ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় ও উফশী জাতের বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে হাইব্রিড জাতের ধান সবে আধাপাকা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় প্রতি বছর বোরো মৌসুমে উৎপাদন হওয়া ধানের বড় একটি অংশ আসে তেনাচিড়া মাঠ থেকে। স্থানীয়রা জানান, এ বড় মাঠে ২০ থেকে ২৫ ভাগ জমির ধান পেকেছে এবং কাটা শুরু হয়েছে। ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ জমির ধান এখনো কাঁচা ও আধাপাকা। উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের ঘুড়িদহ গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, এ বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে হাইব্রিড ধান আবাদ করেছেন। ধান সবে পাকা শুরু হয়েছে, এমন সময় পোকার আক্রমণ। তিনি বলেন, এর মধ্যে কারেন্ট পোকার আক্রমণে ১ বিঘা ধান খেত পুরোটাই নষ্ট হয়ে গেছে। কীটনাশক প্রয়োগ করেও এ পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ হচ্ছে না। পোকার আক্রমণে প্রায় জমিরই কাঁচা ধান শুকিয়ে চিটা হয়ে গেছে। একই হতাশার কথা জানালেন ওই এলাকার কৃষক, ময়নুল ইসলাম, রেজা মিয়া, স্বপন মিয়া ও উপজেলার পদুমশহর ইউনিয়নের বাবুল মিয়া, রাজ্জাক মিয়াসহ আরও অনেক কৃষক। কৃষক রাজ্জাক মিয়া বলেন, এ বছর পরিবারে লোকজন নিয়ে খাব কী সেই চিন্তাই করছি। একই অবস্থা দেখা দিয়েছে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য কৃষকের বোরো ধান খেতে। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কৃষিবিদ খালেদ মাহমুদ বলেন, ধানের চারা রোপণের সময় কিছু ব্যবস্থা নিলে কারেন্ট পোকার আক্রমণ রোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রোপণ, আইলের মধ্যে বিলি কেটে দেওয়া, যথাযথ সার প্রয়োগ, আগাম ও প্রতিরোধে সক্ষম জাতের চারা রোপণের ব্যবস্থা করা হলে এত পোকার আক্রমণ হতো না। এর পরেও কৃষি কর্মকর্তারা পোকা দমনের পরামর্শ দিচ্ছেন।