সাত বছরেও শুরু হয়নি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের দৌলতদিয়া প্রান্তের ফেরিঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ। এদিকে দীর্ঘদিন ফেরিঘাট এলকায় কাজ না হওয়ায় দেখা দিয়েছে ভাঙন। বর্তমানে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। দৌলতদিয়া প্রান্তের ৭ নম্বর ফেরিঘাটের উত্তরের প্রায় ৩০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়েছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে শত শত স্থাপনা। রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ফেরিঘাট আধুনিকায়নে ৬৮০ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। প্রকল্পের অধীনে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া প্রান্তে চার কিলোমিটার ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া প্রান্তে দুই কিলোমিটার এলাকায় ঘাট আধুনিকায়ন হওয়ার কথা ছিল। ২০২১ সালে কাজ শুরু করা যায়নি। এরপর নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যায়। পরে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। বুয়েট কর্তৃপক্ষ ২০২৪ সালে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে নকশার অনুমোদন চূড়ান্ত করে। দৌলতিদিয়া ফেরিঘাটের স্থায়ী বাসিন্দারা জানান, ফেরিঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের জন্য দৌলতদিয়া এলাকার ৭০০ পরিবারের বসতভিটা, দোকানপাটসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণের জন্য তালিকা করা হয়। পরে ফেরিঘাট এলাকায় জমি বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাট এলাকায় দেখা যায়, ফেরিঘাটের ৭ নম্বর ঘাটের উত্তরপাশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক বছরে পদ্মা নদীর ভাঙনে দৌলতদিয়া প্রান্তের চারটি ফেরিঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া প্রান্তে চারটি ঘাট বন্ধ রয়েছে। দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের পশ্চিম পাশে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। ওই এলাকার দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন রোধে স্থায়ী কাজ হওয়ার কথা ছিল। দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের বাসিন্দা চান্দু মোল্লা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল ফেরিঘাট আধুনিকায়ন হবে। তাহলে নদীভাঙন থেকে রক্ষা পাব। আধুনিকায়নের জন্য কাজ শুরু হলে এতদিন কাজ শেষ হয়ে যেত। আমাদের বলা হয়েছিল তোমাদের বাড়ি, দোকান অধিগ্রহণ করব। কিন্তু সেগুলো করা হয়নি। আমরা কয়েক বছর ধরে ঘর, বাড়ি ঠিক করতে পারিনি। এখন আর জমি অধিগ্রহণের কোনো খোঁজখবর নেই। মনে হয় কাজ হবে না।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের সিদ্দিক কাজীর পাড়ার মনির হোসেন মোল্লা বলেন, আমাদের বাড়িঘর ও জমির জন্য টাকা দিতে দিয়েছিল সরকার। চার বছর ধরে একাধিকবার ডিসি অফিসে গেছি। শুনানি হয়েছে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে। আমার ১৬ শতাংশ জমিসহ বাড়িঘর অধিগ্রহণের কথা ছিল। সেগুলো কিছুই হয়নি। ঘাট আধুনিকায়ন তো দূরের কথা, এই কয়েক বছর ধরে নদীভাঙনে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, দৌলতদিয়া পদ্মা ও যমুনার নদীর মিলনস্থান। এখানে প্রতি বছর নদীভাঙন হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এম এম শামিম বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙনরোধে কাজ করা প্রয়োজন। ফেরিঘাট এলাকায় ভাঙনরোধে কাজ করে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ তারিক হাসান বলেন, প্রকল্পটি মতামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।