লবণাক্ততার প্রভাবে হ্রাস পাচ্ছে সাতক্ষীরায় উপকূলীয় অঞ্চলের আবাদি জমি। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন অঞ্চল। এ অঞ্চলের ৩৭ হাজার ১৪৬ হেক্টর জমির মধ্যে ৯৯ শতাংশ অর্থাৎ ৩৬ হাজার ৯১০ হেক্টর জমি লবণাক্ততায় রূপ নিয়েছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অধিকাংশ কৃষিজমি চাষাবাদের অনুপোযোগী হয়ে পড়ছে। ফলে উপকূলীয় এ জনপদের কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। ফলে অনেকে মৎস্য ঘের করতে বাধ্য হচ্ছেন। সুন্দরবন বেষ্টিত এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ কৃষি ও মৎস্য খাত থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাছপালাসহ অন্যান্য উদ্ভিদ। এর প্রভাব গবাদি পশু থেকে শুরু করে মানুষের ওপরেও পড়ছে। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাতক্ষীরার ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬২৬ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে ৮১ শতাংশের বেশি জমি লবণাক্ততার প্রভাবে অকৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। জেলায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ১১০ হেক্টর কৃষি অকৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে পতিত জমি রয়েছে ৪০ হাজার ১০১ হেক্টর। সূত্র জানায়, লবণ পানির প্রভাবে ক্ষতিতে শীর্ষে রয়েছে সাতক্ষীরার উপকূলীয় সুন্দরবন অঞ্চল। এই জনপদের ৩৭ হাজার ১৪৬ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ অর্থাৎ ৩৬ হাজার ৯১০ হেক্টর জমি লবণাক্ততায় রূপ নিয়েছে। এ ছাড়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ৬৩ শতাংশ, কলারোয়ায় ৩৮ শতাংশ, তালায় ৬৪ শতাংশ, দেবহাটায় ৬১ শতাংশ, কালীগঞ্জে ১৬ শতাংশ, আশাশুনি উপজেলায় ৮৭ শতাংশ জমি লবণাক্ততায় রূপ নিয়েছে।
গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুর রহিম বলেন, লবণ পানি যে বছর জমিতে প্রবেশ করে পরবর্তী তিন থেকে চার বছর ওই জমিতে আর কোনো ফসল হয় না। প্রতিবছর নদীর বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে লোনা পানি প্রবেশ করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। লবণাক্ততার কারণে প্লাবিত জমিতে শাকসবজি ও ধান উৎপাদন কষ্টসাধ্য হচ্ছে। তাই চিংড়ি ঘের করছি। শত শত কৃষক পেশা পরিবর্তন করেছে। সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় পাতাখালী গ্রামের মাসুম বিল্লাহ বলেন, কয়েক বছরে কৃষি জমিগুলোর শ্রেণি পরিবর্তন করে রূপ নিয়েছে মৎস্য ঘেরে আর পতিত জমিতে। অনেকেই জমি পরিত্যক্ত ফেলে রাখছে। কারণ সেখানে মৎস্য ঘেরও করার উপযুক্ত নয়। রমজাননগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আল মামুন বলেন, অনেক জমিতে লবণ পানি সহিষ্ণু ধান ও নতুন করে তরমুজ চাষ হচ্ছে। অনেকেই আগে কৃষিজমিকে মৎস্য ঘেরে পরিণত করেছেন। তবে বর্তমানে মাছের ভাইরাসজনিত কারণে সেটা কমেছে। কারণ মৎস্য ঘেরে তুলনামূলক লাভের মুখ দেখতে পারছে না ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক। শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি ইসলাম জানান, সরকারের পক্ষ থেকে লবণসহিষ্ণু ধানের বীজ বিতরণ করা হয়। শাকসবজিসহ ধানের বীজ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় লবণাক্ত অঞ্চলের জন্য ধানের ছয় থেকে সাতটি জাতের বিজের গবেষণা চলমান রয়েছে। এসব জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছে। বর্ষার সময়ে বিভিন্ন প্রজাতির শাকসবজি চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। কারণ বৃষ্টির পানিতে লবণাক্ততা ধুয়ে চলে যায়।