কয়েকজন আন্দোলনকারী দুই হাত প্রসারিত করা গুলিবিদ্ধ ছাত্রকে (আবু সাঈদ) ধরে দাঁড় করায় এবং নিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু তখন গুলিবিদ্ধ ছাত্রটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ওই সময় আমিসহ আরও কয়েকজন দৌড়ে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ছাত্রটিকে পার্কের মোড়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এর মধ্যে পুলিশের ছোড়া গুলি আমার কোমরের বাম পাশে এবং বাম পায়ের হাঁটুর নিচে লাগে। তখন আরও কিছু ছাত্রছাত্রী এগিয়ে আসে এবং গুলিবিদ্ধ ছাত্রটিকে পার্কের মোড়ে নিয়ে গিয়ে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কথাগুলো রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রওনক বসুনিয়ার। আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মনবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি এসব কথা বলেন। এই মামলায় প্রসিকিউশনের ১৯তম সাক্ষী হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল সাক্ষ্য দেন তিনি। পরে এই মামলায়র পরবর্তী সাক্ষ্য উপস্থাপনের জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। জবানবন্দির শুরুতে ২৬ বছর বয়সি রওনক বসুনিয়া নিজের পরিচয় তুলে ধরেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ‘সেদিন একপর্যায়ে পুলিশ গুলি চালায় এবং লাঠিচার্জ করা শুরু করে। তখন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আমি সেই সময় ১ নম্বর গেটের বিপরীতে কাঠের ব্রিজের দিকে চলে আসি, সেখান থেকে আমি দেখতে পাই কয়েকজন পুলিশ একজন কালো টি-শার্ট পরা আন্দোলনকারী ছাত্রকে মারধর করছে। আমি কিছুক্ষণ পর আবার ১ নম্বর গেটের দিকে যাই।’
আবু সাঈদকে পুলিশের গুলিবর্ষণের বর্ণনা দিয়ে জবানবন্দিতে এই সাক্ষী আরও বলেন, ‘আমি দেখি যে একজন আন্দোলনকারী ছাত্র পুলিশের সামনে দুহাত মেলে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তখনই পুলিশ কয়েকবার গুলি চালায়। আমি দেখি, দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটি গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তার ডিভাইডার পার হয়ে বসে পড়ে। তখন একজন আন্দোলনকারী ওই ছাত্রকে ধরে দাঁড় করায় এবং নিয়ে আসার চেষ্টা করে। কিন্তু তখন গুলিবিদ্ধ ছাত্রটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
তখন আমিসহ আরও কয়েকজন দৌড়ে গিয়ে গুলিবিদ্ধ ছাত্রটিকে পার্কের মোড়ের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। এর মধ্যে পুলিশের ছোড়া গুলি আমার কোমরের বাম পাশে এবং বাম পায়ের হাঁটুর নিচে লাগে। তখন আরও কিছু ছাত্রছাত্রী এগিয়ে আসে এবং গুলিবিদ্ধ ছাত্রটিকে পার্কের মোড়ে নিয়ে গিয়ে রিকশায় করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি গুলিবিদ্ধ ছাত্রটি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছে এবং তার নাম আবু সাঈদ।’ একজন শিক্ষার্থী ও সচেতন নাগরিক হিসেবে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সবার বিচার চান এই সাক্ষী।