রাজশাহী মহানগরীর তেরোখাদিয়ায় ফুটপাতের কিছু অংশ দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে পাঁচ তলা ভবন। এটি নির্মাণে কোনো অনুমোদনই নেননি ভবন মালিক সারোয়ার উদ্দিন। ভবনটি ভেঙে ফেলতে এ বছরের ১৩ জানুয়ারি মালিককে নোটিস দেয় রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)। ভবনটির মালিক আইনভঙ্গের কথা স্বীকার করে লিখিতও দেন পরদিন। কিন্তু এখনো ভবনটির নির্মাণকাজ চলছে। দোতলা পর্যন্ত নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি অংশের কাজ চলছে।
সারোয়ার উদ্দিন বলেন, ‘আরডিএ চাইলে ভেঙে দেবে। আমি আমার কাজ করছি। আমার জমি তো আমি ফেলে রাখতে পারব না।’
শুধু সারোয়ার উদ্দিন নন, রাজশাহীতে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। আরডিএ অনুমতি নিয়েও নকশাবহির্ভূতভাবে বা অনুমোদন ছাড়া একের পর এক ভবন গড়ে উঠছে। গত ২০ বছরে এমন সাড়ে ৬ হাজার ভবন মালিককে চিঠি দিয়েছে আরডিএ। কিন্তু অবৈধ এসব ভবনের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি নগর সংস্থাটি। আরডিএর পক্ষ থেকে করা ৭০টি মামলা বিচারাধীন।
আরডিএ মূলত ১৯৮০ সালের পর থেকে নকশা ছাড়া অবৈধভাবে নির্মিত ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে নোটিস করতে শুরু করে। তবে কেবল প্রতিবেশীরা যেসব ভবন নিয়ে অভিযোগ করে, সেসবের বিরুদ্ধেই নোটিস পাঠানো হয়। সে হিসেবে এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভবন মালিককে নোটিস করা হয়েছে।
এর মধ্যে গত ১০ বছরেই নোটিস করা হয়েছে ৬ হাজারের মতো।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১১ সালে রাজশাহী মহানগরীর সবচেয়ে জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সাহেববাজারে ‘এসএস টাওয়ার’ নামে একটি বহুতল ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয় ৯ তলা পর্যন্ত। কিন্তু ভবন মালিক অতিরিক্ত আরও ২ তলা নির্মাণ করেন। আরডিএ বর্ধিত ২ তলা ভাঙার নির্দেশ দিলে বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আরডিএ মামলাটি করলেও নিম্ন আদালতে রায় পান ভবন মালিক সাজ্জাদ হোসেন। পরে আরডিএ মহানগর জজ আদালতে আপিল করে। সে মামলাটি এখনো চলছে।
নগরীর লক্ষ্মীপুরে জিপিও পোস্টঅফিসের উত্তরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয় বছর তিনেক আগে। বিল্ডিং কোড অমান্য করে এ ভবন নির্মাণ করা হয়। একপর্যায়ে ভবনটির দক্ষিণের অংশে ফাটল দেখা দেয়। কিন্তু একাধিকবার কারণ দর্শাতে বলার পরেও এর নির্মাণকাজ বন্ধ করাতে পারেনি আরডিএ। গত বছর শেষের দিকে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ভবনটি বর্তমানে মঞ্জু হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে।
নগরীর দেবীসিংপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলীর আধাপাকা বাড়ির পাশেই অনুমোদিত নকশার বাইরে বিশাল ভবন নির্মাণ করছেন গোলাম আজম।
রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) তারিক হাসান বলেন, ‘অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিই। অনেকের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জনবলসংকটের কারণে আরডিএ এখনো সেভাবে ফাংশন করতে পারছে না। তবে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।’